যে চাকরিতে ভালো না করলেও বেতন বাড়ে

বৃহস্পতিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ৬:০৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট ম্যাচে ৩ উইকেটের লজ্জাজনক পরাজয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই সংবাদ সম্মেলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্রিকেটার ও সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব।
মাঠের ব্যর্থতার পাশাপাশি ক্রিকেটারদের বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুললে স্পষ্টতই বিরক্তি প্রকাশ করেন দলের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নাজমুল হোসেন শান্ত।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নে উঠে আসে—বেতন ও ম্যাচ ফি বাড়ানো হয়েছে, সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে, কোচিং স্টাফও আন্তর্জাতিক মানের—তাহলে এত কিছু সত্ত্বেও কেন টেস্টে উন্নতি আসছে না? প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই কড়াভাবে পাল্টা জবাব দেন শান্ত, “বেতন বাড়ানোয় মনে হয় আপনারা খুশি না…” মুখে ছিল কঠিন ভাব, যেন বলছেন—"খেলার ব্যর্থতায় কেন পারিশ্রমিকের খোঁটা?"
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও, সূত্র বলছে—এ বছর ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আগে একটি টেস্ট ম্যাচে ম্যাচ ফি ছিল ৬ লাখ টাকা, যা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ৮ লাখ। ওয়ানডে ম্যাচে এটি ৩ লাখ থেকে বেড়ে ৪ লাখ হয়েছে।
সেই হিসাবে, সিলেট টেস্টে হারা প্রত্যেক ক্রিকেটার পাচ্ছেন ৮ লাখ টাকা। অথচ ম্যাচের দুই ইনিংস মিলিয়ে একবারও ৩০০ ছুঁতে পারেনি দল। শেষ ৯ ইনিংসের মধ্যে ছয়বার অলআউট হয়েছে ২০০ রানের নিচে। ঘরের মাঠে টানা ৬ টেস্ট হারের পরও এমন পারফরম্যান্স প্রশ্ন তুলছে পারিশ্রমিকের যৌক্তিকতা নিয়ে।
সমর্থকদের হতাশা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিস্তৃত। কেউ মজা করে কুইজ দেন—“বিশ্বের কোন জায়গায় পারফরম্যান্স খারাপ হলেও বেতন বাড়ে?” কেউ সোজাসাপটা দাবি করেন—বেতন কমানো হোক। টিপ্পনী, বিদ্রূপ, হাস্যরস ছাপিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, মাঠে ফল না দিলে এই ‘বেতন বৃদ্ধি’ কতটা ন্যায্য?
বেতনের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করা রূঢ় মনে হলেও, শান্ত পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখে আনেন হাসি। বলেন, “আর কী করলে ভালো করব, ব্যাপারটা এমন নয়। ভালো ক্রিকেট খেলা জরুরি। আমরা যেমন ক্রিকেট খেলছি, আমাদের অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে যে ভালো করতে পারছি না।”
তবে এমন দায় স্বীকারের উদাহরণ নতুন নয়। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ভারত সফর কিংবা চলতি বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি—সবকিছুতেই সান্ত্বনার ভাষা থাকে ঠিকই, কিন্তু ফলাফল থেকে যায় হতাশাজনক।
পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ জয় বা ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি সাফল্যের মতো ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটলেও, ধারাবাহিকতা নেই। বরং ব্যর্থতাগুলোই হয়ে উঠছে বড় ছবি—আর তাতেই ক্ষুব্ধ সমর্থকরা।
প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—সমালোচনাকে ‘খোঁটা’ হিসেবে নেবেন, নাকি আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান চিত্র এমনই—স্বপ্ন আছে, সুযোগ-সুবিধাও আছে; কিন্তু মাঠে ফল নেই। ঘুরে দাঁড়াতে হলে শুধু মুখের কথা নয়, কাজে করে দেখাতে হবে।
১১৩ বার পড়া হয়েছে