রানা প্লাজা ধস: এক যুগেও শেষ হয়নি বিচার, ক্ষোভে ফুঁসছেন ভুক্তভোগীরা

বৃহস্পতিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ৫:০৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সাভারের রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর পূর্ণ হলেও এখনো শেষ হয়নি নিহত শ্রমিকদের হত্যা মামলার বিচার।
এক হাজার ১৩৫ জন শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনায় দায়ের করা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে ধীর গতিতে। ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ৯৩ জন। মামলার নিষ্পত্তির কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা জানাতে পারেননি সরকারের আইনজীবীরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন এক হাজারের বেশি শ্রমিক, গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হন আরও সহস্রাধিক মানুষ। এ ঘটনায় মোট ২০টি মামলা দায়ের হয়, যার মধ্যে তিনটি ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন। হত্যা মামলাটি বর্তমানে ঢাকার জেলা জজ আদালতে চলছে।
রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ৩৮ জন এখনো এই মামলার আসামি। তিনজন আসামির ইতিমধ্যে মৃত্যু হওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একমাত্র সোহেল রানা কারাগারে রয়েছেন।
এতদিনেও বিচার শেষ না হওয়ায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিক মাসুদা খাতুন বলেন, “বিচার পাওয়ার আশায় আমাদের এক যুগ কেটে গেল। কিন্তু বিচার পেলাম না। যাঁদের কারণে এত শ্রমিক খুন হলেন, তাঁদের কারও শাস্তি হলো না।”
সরকারি কৌঁসুলি মো. ইকবাল হোসেন জানান, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ সচেষ্ট। তবে উচ্চ আদালতের একাধিক স্থগিতাদেশ, সাক্ষীদের অনুপস্থিতি এবং পূর্ববর্তী সরকারের 'আন্তরিকতার ঘাটতি'র কারণেই বিচার প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলছে।
মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, তদন্ত শেষ করতেই কেটে যায় দুই বছর। জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমতি না পাওয়ায় ছয় সরকারি কর্মকর্তাকে আসামি করতেও সময় লেগেছে। উচ্চ আদালতে সাত আসামির করা চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বছর ধরে স্থগিত ছিল সাক্ষ্য গ্রহণ। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে তা পুনরায় শুরু হয়।
এর বাইরে ভবন নির্মাণ আইন লঙ্ঘনের মামলার বিচারও ঢাকার আদালতে ঝুলে আছে। এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ রয়েছে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা রয়েছে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে, যা এখন সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
শ্রমিকনেত্রী কল্পনা আক্তার বলেন, “রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো, তাহলে অন্য কারখানার মালিকেরা ভয় পেতেন। তাঁরা শ্রমিকদের জীবনকে গুরুত্ব দিতেন। এই বিচার শেষ না হওয়াটা শ্রমিকদের প্রতি রাষ্ট্রের অবহেলার প্রমাণ।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অন্তত এই বিচার শেষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
১১৮ বার পড়া হয়েছে