সর্বশেষ

আন্তর্জাতিক

প্রলোভনের ফাঁদে রুশ সেনাবাহিনীতে আটকা পড়ছে বাংলাদেশিরা 

ডেস্ক রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ ৩:৩১ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের আগুনে জড়িয়ে পড়েছেন একাধিক বাংলাদেশি তরুণ।

কাজের প্রলোভনে গিয়ে দালালদের ফাঁদে পড়ে তাঁরা এখন রুশ সেনাবাহিনীর সদস্য, কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে।

এ পর্যন্ত অন্তত ৪০-৫০ জন বাংলাদেশি রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনে যুদ্ধ করেছেন বলে জানিয়েছেন বর্তমানে দোনেৎস্কে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি তরুণ। ভয়, অনিশ্চয়তা আর ক্ষুধার মধ্যে জীবন কাটছে তাঁদের। খাবার বলতে শুকনা রুটি, পাস্তা—আর দিনের পর দিন বাঁচার লড়াই।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন তিনজন বাংলাদেশি তরুণ, যাঁরা এখন রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছেন। তাঁরা কেউই তাঁদের পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি। জীবনের নিরাপত্তার জন্য তাঁরা ভয়েস রেকর্ড বা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন।

তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রায় অভিন্ন। সবাই বাংলাদেশ থেকে দালালের মাধ্যমে রাশিয়ায় যান। প্রতিশ্রুতি ছিল বৈধ চাকরি, নাগরিকত্ব ও ভালো বেতন। কিন্তু বাস্তবতা হয় ভিন্ন। কিছুদিন কাজ করার পরই প্রতিষ্ঠান থেকে ছাঁটাই। এরপর ফেরার চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে যান রুশ দালালের খপ্পরে।

“বিক্রি হয়ে গেছি, ফেরার আর উপায় নেই”
গাজীপুরের অয়ন মণ্ডল, ময়মনসিংহের আফজাল হোসেন মেরাজ, পুরান ঢাকার সোহাগ মিয়া, রাঙামাটির অমিত বড়ুয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোহাম্মদ আকরাম মিয়া—তাঁদের সবাইকেই রাশিয়ায় একই কৌশলে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়। কেউ পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পর ‘চুক্তিনামায়’ স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন, কেউ বা ‘ভিসা নবায়নের’ নাম করে ঠকেন।

আফজাল হোসেন বলেন, “কিসের প্রশিক্ষণ! তিন-চার দিন বন্দুক লোড, গুলি চালানো শিখিয়েই হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দেয়। এরপর সরাসরি যুদ্ধে পাঠানো হয়।”

জীবন দিলেন মোহাম্মদ আকরাম
গত ১৮ এপ্রিল ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মোহাম্মদ আকরাম মিয়া (২২)। তিনি আগে রাশিয়ায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। চাকরি হারানোর পর সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য হন। আকরামের মৃত্যুর খবর তাঁর পরিবারকে দেন আরেক বাংলাদেশি সহযোদ্ধা। আকরামের মতো আরও অনেকেই জীবন হাতে নিয়ে যুদ্ধ করছেন।

“অনিশ্চিত জায়গায় আছি, এক সেকেন্ডেরও ভরসা নাই”
হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলা এক তরুণ বলেন, “যতই দিন যাচ্ছে, ঝুঁকি বাড়ছে। গোলাগুলি, ড্রোন হামলা লেগেই আছে। একবার খাবার ও গোলাবারুদ নিতে গিয়ে হামলা হয়, তবে বেঁচে ফিরি।”

তাঁরা জানান, অনেকেই নিখোঁজ। অনেকে ফিরে আসতে চাইলেও উপায় নেই। বেতনও মেলে না সময়মতো। “আমরা লুকিয়ে ফোন চালাই। যোগাযোগ বন্ধ থাকলে কেউ জানে না, বেঁচে আছি কি না,” বলেন আরেকজন।

“রাশিয়া যাওয়া মানেই মৃত্যুপুরীর দিকে যাত্রা”
তাঁদের কণ্ঠে অনুরোধ—আর কেউ যেন দালালদের ফাঁদে পা না দেন। “দেশে ফিরতে চাই। সরকার যেন আমাদের উদ্ধার করে,” বলেন একাধিক তরুণ।

এদিকে তাঁদের অভিভাবকরাও দিশেহারা। সন্তানের খোঁজ না পেয়ে কাঁদছেন কেউ কেউ। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

১২৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন