জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনে ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ

সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫ ৬:১৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে রাজধানীর মিরপুরে বিশাল পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। প্রায় ২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে মোট ২ হাজার ৬০০টি ফ্ল্যাট।
মিরপুরের দুটি স্থানে এই ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি দেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য পুনর্বাসন উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রকল্পটির প্রস্তাব ইতোমধ্যে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় অনুমোদিত হয়েছে এবং এখন এটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুন মাসের পর দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, মিরপুর সেকশন-৯ এ প্রথম প্রকল্পে নির্মিত হবে ১৫টি ভবন, যাতে থাকবে মোট ১ হাজার ৫৬০টি ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার বর্গফুট। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে, মিরপুর সেকশন-১৬ এ নির্মিত হবে আরও ১ হাজার ৪০টি ফ্ল্যাট। এর জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।
এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারকে স্থায়ী পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। ওই আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং অসংখ্য মানুষ আহত হন। অনেকেই এখনো চিকিৎসাধীন, অনেক পরিবার হারিয়েছে তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে। এই প্রেক্ষাপটেই পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
শুধু মিরপুর নয়, ঢাকার বাইরে রংপুরেও একই ধরনের ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। রংপুরের সরকারি খাসজমিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারীদের পাশাপাশি অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবারের জন্যও ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জমি হস্তান্তর নিয়ে চিঠি চালাচালি শুরু হয়েছে।
এর আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে মিরপুরের ১৫ নম্বর সেকশনের একটি প্রকল্প থেকে ১০০টি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়। একইভাবে এই প্রকল্পও বাস্তবায়িত হলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদ ও আহত পরিবারদের জন্য নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে যাচাই কমিটির সভার তারিখও নির্ধারিত হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির জানিয়েছেন, পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। শুরুতে মিরপুরে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যান্য জেলায়ও একই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, "এই প্রকল্পের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহত পরিবারগুলোকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ফ্ল্যাট প্রদান করা হবে। সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে এবং পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী সম্প্রসারিত হবে।"
১২২ বার পড়া হয়েছে