ফের সংগঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ, পেছনের মদদদাতা কারা

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ ৫:৪৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতাকর্মীরা সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝটিকা মিছিল ও গোপন বৈঠক করছে।
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা এবং নিষ্ক্রিয়তার মাঝেও দলটির এই সক্রিয়তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নেন। এর আগে-পরে পালিয়ে যান তার সরকারের একাধিক শীর্ষনেতা। যারা পালাতে পারেননি, তারা আত্মগোপনে চলে যান বা গ্রেফতার হন।
এরপর দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও আওয়ামী লীগকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এ অবস্থায় দলটির মাঠে ফেরার চেষ্টা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় উত্তরার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে একটি ঝটিকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে রাজধানীর আরও অন্তত তিনটি স্থানে এমন মিছিল হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলার অভিযোগও উঠেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসনের একটি অংশের নীরব সমর্থন কিংবা নিষ্ক্রিয়তার সুযোগেই এই সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্ভব হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থান ঠেকাতে কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী এবং বিদেশি কূটনৈতিক মহল আওয়ামী লীগের প্রতি নিরব সমর্থন দিচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, "কম্প্রোমাইজের রাজনীতি যারা করছেন, তারা সাবধান হোন। আমি শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ শুরু করলে নিতে পারবেন না।"
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, “ফ্যাসিবাদের শেকড় যেন আর না গজায়—এজন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাই হবে বড় রাজনৈতিক সংস্কার।”
অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেন, “দলকে নিষিদ্ধ না করলেও যেসব ব্যক্তি ক্ষমতায় থেকে অপকর্ম করেছে, তাদের বিচার হওয়া জরুরি। না হলে এমন অপরাধ বারবার ঘটবে।”
এদিকে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে মিছিল-সমাবেশ করতে না পারে।
তবে পরিস্থিতি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, দলটির নেতৃত্বে থেকে কেউ কেউ আবার রাজনীতির মাঠে ফেরার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি ও জামায়াতের কিছু নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে আবার সংগঠিত হওয়ার অভিযোগও উঠছে।
বিশ্লেষকদের শঙ্কা, যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অস্থিরতা আবারও বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
১০৩ বার পড়া হয়েছে