সর্বশেষ

সারাদেশ

খালে পড়ে শিশুর মৃত্যু: আবারও প্রশ্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ ৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় হিজড়া খালে পড়ে মারা গেছে ছয় বছর বয়সী শিশু সেহরিশ।

নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে চাক্তাই খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার রাত আটটার দিকে পরিবারের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে ফুফুর বাড়িতে যাওয়ার পথে ছোট একটি সড়কের মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যান তারা। দাদি ও মা খাল থেকে উঠতে পারলেও সেহরিশ পানির স্রোতে ভেসে যায়।

দুর্ঘটনার পর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে খাল থেকে অপসারণ করা হয় আবর্জনার স্তূপ। ডুবুরি দল চালায় তল্লাশি। পরদিন সকালে প্রায় চার কিলোমিটার দূরের চাক্তাই খালে শিশুটির মরদেহ ভেসে ওঠে।

ঘটনাস্থলে বর্তমানে বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হলেও শহরের অন্যান্য খাল-নালা এখনো অনেকাংশেই উন্মুক্ত রয়ে গেছে, যা জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।


ছয় বছরে প্রাণহানির সংখ্যা ১৪
সেহরিশের মৃত্যু আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রামের খাল-নালার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন খাল-নালায় পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন।

২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি ৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৪ সালে মারা যান ৩ জন এবং ২০২৫ সালের এটাই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই বর্ষা মৌসুমে ঘটেছে, যখন সড়ক আর খালের মধ্যকার সীমারেখা বোঝা যায় না।


নগরের খাল ব্যবস্থাপনা: সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা প্রশ্নের মুখে
সেহরিশের মৃত্যুর পর নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, “আর কত প্রাণ ঝরলে প্রশাসনের টনক নড়বে? প্রতিবার মৃত্যুর পর কিছুদিন আলোচনা চলে, পরে সবকিছু থেমে যায়।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, হিজড়া খালের যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটে, সেখানে আগে বাঁশের বেড়া ছিল, যা জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজের সময় সরিয়ে ফেলা হয়।

বর্তমানে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে রয়েছে প্রায় ১১৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল-নালা, এর মধ্যে ৫৭টি খাল। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, ৩৬টি খালের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।


বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “উন্মুক্ত খাল-নালা নিরাপদ করতে দীর্ঘদিন ধরেই প্রকল্প নেওয়ার দাবি করা হচ্ছে, কিন্তু আলাদা কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই উন্মুক্ত অংশে বেষ্টনী বসানো জরুরি।”


নগরবাসীর আশঙ্কা: 'আজ সেহরিশ, কাল কে?'
বহদ্দারহাট মোড়ে কথা হয় পথচারী ইকবাল হায়দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, “বর্ষায় সড়ক আর খাল এক হয়ে যায়। বুঝা যায় না কোনটা রাস্তায় আর কোনটা খাল। তখনই ঘটে বড় দুর্ঘটনা।”

নগরবাসীর প্রশ্ন—এই মৃত্যু মিছিল কি কখনো থামবে? প্রশাসনের পদক্ষেপ কি কেবল ঘটনার পরই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি দুর্ঘটনার আগেই নিশ্চিত করা হবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা?

১১৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন