ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য চিহ্ন, নাসার ওয়েব টেলিস্কোপে যুগান্তকারী আবিষ্কার

বৃহস্পতিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ৯:০৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে সৌরজগতের বাইরের এক গ্রহে।
নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে পাওয়া এক পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞানীরা এমন দুটি রাসায়নিক গ্যাসের সন্ধান পেয়েছেন, যা সাধারণত পৃথিবীতে কেবল জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়।
গ্রহটির নাম কে২-১৮ বি, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে লিও নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত। এটি একটি লাল বামন তারার চারপাশে ঘুরছে এবং এমন একটি কক্ষপথে রয়েছে, যেটিকে বিজ্ঞানীরা “বাসযোগ্য অঞ্চল” বলে মনে করেন। এই অঞ্চলে তরল পানি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিএমএস এবং ডিএমডিএস-এর উপস্থিতি
ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে পাওয়া গেছে ডাইমিথাইল সালফাইড (DMS) এবং ডাইমিথাইল ডিসালফাইড (DMDS) নামের দুটি গ্যাস। পৃথিবীতে এই গ্যাস দুটি তৈরি হয় মূলত সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের মতো অণুজীব থেকে, অর্থাৎ এগুলো জৈবিক উৎপত্তির গ্যাস। তাই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, গ্রহটিতে অণুজীবের মতো প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে।
এখনও নিশ্চিত নয় প্রাণের অস্তিত্ব
তবে বিজ্ঞানীরা সতর্কভাবে বলছেন, তাঁরা এখনো কে২-১৮ বি-তে জীবন্ত প্রাণের অস্তিত্বের সরাসরি প্রমাণ পাননি। বরং তাঁরা সম্ভাব্য জৈব চিহ্ন শনাক্ত করেছেন, যা কোনো জৈবিক প্রক্রিয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে। এই কারণে তাঁরা আরও গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছেন।
“প্রাণে ভরা হাইসিয়ান জগৎ” হতে পারে
এই গবেষণার প্রধান লেখক, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন বলেন,
“এই আবিষ্কারটি সৌরজগতের বাইরের কোনো গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য উপস্থিতির সবচেয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত হতে পারে। আমরা এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে পর্যবেক্ষণমূলক অ্যাস্ট্রোবায়োলজির মাধ্যমে জৈব চিহ্ন শনাক্ত করা সম্ভব।”
তিনি আরও জানান, কে২-১৮ বি গ্রহটি সম্ভবত একটি ‘হাইসিয়ান জগৎ’—যার বৈশিষ্ট্য হলো হাইড্রোজেনসমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল এবং তরল পানির বিশাল মহাসাগর। এই ধরণের গ্রহে প্রাণের জন্য উপযোগী পরিবেশ থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রহের গঠন ও আকার
কে২-১৮ বি গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় ৮.৬ গুণ বেশি ভারী এবং এর ব্যাসার্ধ পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ২.৬ গুণ বড়। এর আগে টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড-এর উপস্থিতিও শনাক্ত করা হয়েছিল, যা সম্ভাব্য জৈব প্রক্রিয়ার ইঙ্গিত দেয়।
মহাকাশে প্রাণের খোঁজ: এক নতুন দিগন্ত
১৯৯০-এর দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রায় ৫,৮০০টি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করেছেন। এর মধ্যে অনেকগুলোকেই সম্ভাব্য বাসযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কে২-১৮ বি-তে DMS ও DMDS গ্যাসের উপস্থিতি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার বলে মনে করা হচ্ছে।
এখন বিজ্ঞানীদের নজর আরও গভীর অনুসন্ধানের দিকে। ভবিষ্যতের পর্যবেক্ষণগুলো যদি এই প্রমাণকে আরও জোরালো করে তোলে, তাহলে এটি হতে পারে মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধানে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
১৩৩ বার পড়া হয়েছে