‘হানি ট্র্যাপ’ কাণ্ডে সৌদি রাষ্ট্রদূত টার্গেট ছিল মেঘনার

বৃহস্পতিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ৮:১৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
মডেল ও উদ্যোক্তা মেঘনা আলমকে ঘিরে ‘হানি ট্র্যাপ’ কেলেঙ্কারিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে তদন্তে।
অভিযোগ রয়েছে, কৌশলে হাইপ্রোফাইল বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে ফেলতেন তিনি। এসব কর্মকাণ্ডে তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন মানব পাচারকারী চক্রের হোতা মো. দেওয়ান সমীর (৫৮)।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ তারা সৌদি আরবের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন ঈসা আল দুহাইলানকে টার্গেট করে। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে তাকে ৫০ লাখ ডলার দিতে বাধ্য করার অপচেষ্টা চালানো হয়। এ ঘটনায় ঢাকার ভাটারা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় দেওয়ান সমীর বর্তমানে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন।
মডেল মেঘনা আলমকে আটকের পর বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মেঘনা আলম সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তিনি ব্যক্তিগত মুহূর্ত ভিডিও করে তা ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করতে চেয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রটি আরও অনেক প্রভাবশালী বিদেশি কূটনীতিকের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ফাঁদ পেতেছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দেওয়ান সমীর বিভিন্ন সুন্দরী নারীকে দিয়ে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের প্রেমের জালে ফেলে, পরে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ধারণ করে অর্থ আদায়ের ফাঁদ পাততেন।
ডিবির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেওয়ান সমীরের বিরুদ্ধে করা মামলায় যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তার ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠান ‘সানজানা’র আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারের কার্যক্রম চালানো হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, হাইপ্রোফাইল এই ঘটনায় আলোচনার মধ্যেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে মেঘনা আলম ইস্যুর যোগসূত্র রয়েছে বলেই অনেক কর্মকর্তার ধারণা।
মেঘনা আলমের গ্রেফতার নিয়ে আইনি প্রশ্নও উঠেছে। মেঘনার বাবার করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার, কারণ না জানানো, ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ডিবি হেফাজতে রাখা এবং আইনজীবী না দেওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে রুল জারি করেছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “মেঘনাকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটি প্রশ্নবিদ্ধ।”
মেঘনার পরিবার দাবি করেছে, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার সম্পর্ক গোপনে বাগদানে গড়ায়। তবে এর কোনো প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করতে পারেনি তারা।
উল্লেখ্য, মেঘনা আলম ২০২০ সালে ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ খেতাব অর্জন করেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ শেষ করে তিনি মডেলিংয়ের পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করছিলেন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তিনি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করেছিলেন।
১৩২ বার পড়া হয়েছে