ঋণের চাপে আত্মহত্যা, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ালো বিভ্রান্তিকর তথ্য

বৃহস্পতিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে ট্রেনের নিচে শুয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন পেঁয়াজচাষি মীর রুহুল আমিন (৭০)। গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) ভোরে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে শুয়ে পড়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।
এ সময় কয়েকজন তরুণ তাঁর আত্মহত্যার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন, যা ঘিরে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হয়, মীর রুহুল আমিনের স্ত্রী মারা গেছেন, সন্তানরা তাঁকে অবহেলা করেছেন এবং অবশেষে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব তথ্য সঠিক নয়।
মীর রুহুল আমিনের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঝপাড়া বাউসা গ্রামে। তাঁর স্ত্রী মরিয়ম বেগম এখনও জীবিত এবং সুস্থ। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, মেয়ে থাকেন ঈশ্বরদীতে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল বলেই জানান স্ত্রী মরিয়ম ও সন্তানরা।
মরিয়ম বেগম বলেন, “ঘটনার দিন সকালে খেয়ে তিনি চিকিৎসকের কাছে যাবেন বলে বের হন। বেলা তিনটার দিকে ফোনে কথা হয়েছে। তখনো বলেছিলেন, পরদিন পেঁয়াজ তুলতে হবে, আকাশে মেঘ করছে, পলিথিন কিনে আনতে হবে।”
এদিকে, আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কৃষি ঋণের চাপ। পরিবারের সদস্যরা জানান, মীর রুহুল আমিন স্থানীয় তিনটি বেসরকারি সংস্থা থেকে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৬৪ হাজার ও ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন পেঁয়াজ চাষের জন্য। প্রতিসপ্তাহে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হতো তাঁকে। এখনো ৯৯ হাজার টাকার বেশি ঋণ অবশিষ্ট ছিল। পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় আয় অনুযায়ী দেনা পরিশোধে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে, পারিবারিক নির্যাতনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, “তিনি ঋণের কারণে হতাশায় ছিলেন এবং শারীরিকভাবেও কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে এসব বিষয় সামনে এসেছে।”
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ঘটনায় স্থানীয় পরিবারটি চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। মীর রুহুল আমিনের আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা অনুরোধ জানিয়েছেন, ভিন্ন প্রেক্ষাপট না জেনে সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে গুজব না ছড়াতে।
১৩২ বার পড়া হয়েছে