পেঁয়াজের বাজার হঠাৎ গরম, দামে বঞ্চিত প্রান্তিক চাষিরা

বৃহস্পতিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ৩:২৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর গোলাই গ্রামের চাষি মজিবুল ইসলাম ১০ এপ্রিল রাজশাহীর পাইকারি বাজারে ৮ মণ পেঁয়াজ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতি কেজিতে ১৮ টাকার বেশি কেউ দাম না বলায় ক্ষুব্ধ হয়ে আড়তে পেঁয়াজ ফেলে বাড়ি ফিরে যান তিনি।
পরে আড়তদার ২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে তাঁর বাড়িতে টাকা পাঠান। অথচ এক সপ্তাহ পর সেই পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) একই পেঁয়াজ বিক্রি করলে মজিবুল প্রায় ২৫ হাজার টাকা বেশি পেতেন বলে জানান। “সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে,” বলেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহীর পাইকারি বাজারে গতকাল পেঁয়াজ ৩৮ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে দুর্গাপুর ও বানেশ্বর মোকামে মণপ্রতি ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ১৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ কেনাবেচা হয়েছে, যা কেজিতে দাঁড়ায় প্রায় ৪৭ থেকে ৫৪ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি পেঁয়াজ গুদামজাত করায় দাম বেড়েছে। পুঠিয়ার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, “অনেকেই এখন পেঁয়াজ মজুদ করছেন, এতে দাম আরও বাড়ছে।”
বড় চাষিরা যেখানে ‘এয়ার ফ্লো’ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে বাজারের উত্থানে লাভ করছেন, সেখানে প্রান্তিক চাষিরা সংরক্ষণের অভাবে তাড়াতাড়ি বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চারঘাট উপজেলার চাষি মামুন অর রশিদ জানান, তিনি এবার প্রায় ৫০০ মণ পেঁয়াজ পাবেন বলে আশা করছেন। এরই মধ্যে ৩০০ মণ তোলার পর ৩০ মণ শ্রমিক খরচ মেটাতে বিক্রি করেছেন, বাকি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবেন।
সরকার সাধারণ কৃষকদের পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুযোগ দিতে রাজশাহীর বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়ায় ১০০টি মডেল সংরক্ষণ ঘর নির্মাণ করেছে। তবে সেগুলোর অধিকাংশ এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, একেকটি ঘরে ৩০০ থেকে ৪৫০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ ৬ থেকে ৯ মাস সংরক্ষণ করা যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ২১ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ৭৮ শতাংশ পেঁয়াজ আহরণ করা হয়েছে, মাঠে রয়েছে বাকি ২২ শতাংশ।
উপপরিচালক উম্মে সালমা জানান, কৃষকদের বাড়িতে ‘এয়ার ফ্লো’ পদ্ধতিতে সংরক্ষণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এবার আমদানি না থাকায় দাম বাড়ছে, ফলে চাষিরা ভালো লাভের সম্ভাবনায় রয়েছেন।”
১২৬ বার পড়া হয়েছে