বেনাপোল কাস্টমসে বেড়েছে রাজস্ব, নজিরবিহীন সাফল্য

সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১০:০০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ কিছুটা কমলেও, রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৬৬ দশমিক ১৫ কোটি টাকা বেশি। এই অর্জনের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪৩২ দশমিক ৩ কোটি টাকা। অথচ সেখানেই প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে রাজস্ব আদায় হয় ৫ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা। মাসভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে রাজস্ব আদায় সর্বাধিক ছিল।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বাণিজ্য পরিস্থিতি
গত বছরের মাঝামাঝিতে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনের পর আমদানি-রপ্তানিতে সাময়িক মন্দা দেখা দেয়। ভারতে রপ্তানি হয় প্রায় ২৮ লাখ ৪০ হাজার টন পণ্য, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার টন কম। আমদানি খাতেও ১৯ হাজার টনের মতো ঘাটতি ছিল।
তবে নতুন সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে ডলার সংকট কমে আসায় আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় গতি ফিরছে বলে জানান বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান। তার ভাষায়, “এখন আর আমদানিকারকদের এলসি (ঋণপত্র) খুলতে সমস্যা হচ্ছে না। ফলে আগামী দিনে বাণিজ্য আরও বাড়বে।”
কার্যকর উদ্যোগে সফল কাস্টমস প্রশাসন
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. কামরুজ্জামান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই কাস্টমস শেডগুলোর পরিদর্শন, অবৈধ পণ্য আটক, শুল্ক ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এরই ফলশ্রুতিতে গত কয়েক মাসে কোটি কোটি টাকার অবৈধ পণ্য আটক করা হয়েছে। শুধু এক মাসেই (সেপ্টেম্বর) ১৭ নম্বর শেড থেকে মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য জব্দ করা হয়।
এছাড়া চেকপোস্টে ১২ হাজারের বেশি পণ্যের চালান আটকের মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে বড় অঙ্কের রাজস্ব জমা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন বসানো ও কার্গো টার্মিনাল চালু করায় পণ্য খালাসের গতি বেড়েছে, কমেছে হয়রানি।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
কাস্টমসের এই সাফল্যে খুশি ব্যবসায়ীরাও। বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, “রাজস্ব ফাঁকি রোধে কাস্টমসের কড়াকড়ির কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছুটা বিপাকে পড়লেও, বৈধ ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাচ্ছেন। এতে ব্যবসার গতি বেড়েছে।”
কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, “আমরা রাজস্ব আহরণে সাফল্যের পাশাপাশি বৈধ বাণিজ্য সহজীকরণেও কাজ করছি। আগামী দিনে এ প্রবণতা ধরে রাখতে চাই।”
বেনাপোল দিয়ে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্প কারখানার কাঁচামাল, গার্মেন্টস, শিশু খাদ্য, মাছ ও কেমিকেল। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাট, পোশাক, কেমিকেল, মেলামাইন ও টিস্যু পণ্য।
১১৩ বার পড়া হয়েছে