বর্ষায় বাড়ছে এডিস মশার ঝুঁকি, বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন সতর্কবার্তা

রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ৫:২১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রধান বাহক এডিস মশার প্রাদুর্ভাব।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে চলতি বর্ষায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৭৪ জন রোগী।
এদিকে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু এলাকায় বজ্রসহ বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানান, "প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে—এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থলগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে হবে।"
আরেক কীটতত্ত্ববিদ ড. জিএম সাইফুর রহমান বলেন, "বৃষ্টির পর প্রথম যে প্রজন্মের মশাগুলো জন্ম নেয়, তারা মশার ঘনত্ব অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। এখনই বিটিআই বা পরিবেশবান্ধব লার্ভিসাইড ব্যবহার করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব ঠেকানো সম্ভব।"
বিটিআই (ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ইস্রায়েলেনসিস) একটি প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া, যা মশার লার্ভা ধ্বংসে কার্যকর জৈব কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তিনি আরও জানান, "গত বছর সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাব ছিল। তবে এ বছর কিছুটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে।" তিনি সারাদেশে মশা নিয়ন্ত্রণ ইউনিট গঠনেরও আহ্বান জানান।
এদিকে, রাজধানীর বাসিন্দারাও মশার প্রকোপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ঢাকার জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “বাড়ির আশপাশ ও ড্রেনে মশার প্রজননস্থল সক্রিয় রয়েছে। রাস্তা উঁচু করায় আমাদের বাড়ির আঙিনায় বছরজুড়ে পানি জমে থাকে, যা এডিস মশার জন্য আদর্শ প্রজননস্থল।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “সিটি করপোরেশন এখনই ব্যবস্থা না নিলে জুরাইন হবে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান, ডেঙ্গু মৌসুমকে কেন্দ্র করে কাজের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, “নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি আমাদের মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা অভিযান পরিচালনা করছেন।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায়ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়দের মতে, সময়মতো সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
১২২ বার পড়া হয়েছে