বান্দরবানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে র্যালি ও মানববন্ধন

শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০৩ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
বান্দরবান, ১১ এপ্রিল: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধ, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে দাবি জানিয়ে বান্দরবানে র্যালি ও মানববন্ধন করেছেন অর্ধ-শতাধিক তরুণ জলবায়ু কর্মী।
শুক্রবার সকাল ১০টায় বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে মানববন্ধনে মিলিত হয়।
এ কর্মসূচির আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাংবাদিক মিডিয়া, সহযোগিতায় ছিল ইয়ুথনেট গ্লোবাল ও YDSB।
বিশ্বজুড়ে পালিত হওয়া ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে ইয়ুথনেট গ্লোবাল এবং ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ গ্রুপ’-এর নেতৃত্বে দেশের ৫০টি জেলার মতো বান্দরবানে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
নানা শ্রেণি-পেশার তরুণদের সরব অংশগ্রহণ
এই জলবায়ু ধর্মঘটে অংশ নেন ফায়ার সার্ভিস, ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ওয়াটার ইয়ুথ পার্লামেন্ট, OAB ফাউন্ডেশন, বান্দরবান পার্সিভিয়ারেন্স কোচিং, পার্বত্য কোচিং সেন্টারসহ জেলার বিভিন্ন তরুণ সংগঠনের সদস্যরা।
র্যালি ও সমাবেশের পুরো সময় জুড়ে তরুণদের হাতে ছিল নানা রঙিন ব্যানার ও পোস্টার, যেখানে লেখা ছিল—
“ভুয়া সমাধান নয়, নবায়নযোগ্য শক্তি চাই”,
“জীবাশ্ম জ্বালানি নয়, টেকসই শক্তির পথে হাঁটো”,
“ভবিষ্যৎ বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ জরুরি”।
তরুণরা দাবি জানান, বাংলাদেশ সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতিতে নবায়নযোগ্য শক্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ ও বাসযোগ্য দেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
বক্তাদের কণ্ঠে উদ্বেগ, প্রস্তাবে ছিল বাস্তবতা
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইয়ুথনেট গ্লোবাল বান্দরবান জেলার সমন্বয়ক শাওন বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী সাজ্জাদ হোছাইন, সহ-সমন্বয়কারী জাহেদ হোসেন, YDSB-এর ফাউন্ডার লিলি প্রু মার্মা, পার্বত্য কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও শিক্ষক রাহুল দাশ, সাবেক জেলা সমন্বয়কারী আসিফ ইকবাল, বিভাগীয় অ্যাডভাইজার হাবিব আল মাহমুদ এবং সঞ্চালক মোঃ ইব্রাহিম।
বক্তারা বলেন, “বিশ্বের উন্নত দেশ ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অব্যাহত জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ জলবায়ু সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে। এখনই যদি টেকসই শক্তির দিকে যাত্রা শুরু না হয়, তাহলে আমরা একটি বিপর্যয়কর ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছি।”
তারা জোর দেন, সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
আদিবাসী তরুণদের কণ্ঠে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাস্তবতা
YDSB বান্দরবান জেলার ফাউন্ডার লিলি প্রু মার্মা বলেন, “আদিকাল থেকে আদিবাসী জনগণই প্রকৃতি, জমি ও পানির সংরক্ষণে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু তাদের অংশগ্রহণ জলবায়ু নীতিনির্ধারণে উপেক্ষিত হয়। তরুণদের দায়িত্ব—এই চিত্র বদলে দেওয়া।”
তিনি আরও বলেন, “তৃণমূল বাস্তবতা ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সংযোগ তৈরির মধ্য দিয়েই জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এই সংযোগে আদিবাসী তরুণদের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞান একসাথে কাজ করতে পারে।”
সমালোচনার মুখে আইইপিএমপি পরিকল্পনা
ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, “সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (IEPMP) বাস্তবায়িত হলে ব্যয়বহুল এবং দূষণকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আরও বাড়বে, যা দেশের জলবায়ু লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ পরিকল্পনা সংশোধন করে একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং স্থানীয় বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানো পরিকল্পনা প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ জীবাশ্ম জ্বালানির মুনাফার জন্য বিক্রি করা চলবে না। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারই টেকসই ভবিষ্যতের পথ।”
সমাপ্তি বক্তব্য ও ভবিষ্যৎ বার্তা
সমাবেশে আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলোর উচিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া জলবায়ু ঋণ নিঃশর্তভাবে মওকুফ করা। একই সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষকে সচেতন করে, ঘরে ঘরে টেকসই চর্চা ও গাছ লাগানোর উদ্যোগ বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানানো হয়।
এই আন্দোলন শুধু প্রতিবাদ নয়, বরং একটি টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্ন। তরুণ প্রজন্ম সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছে।
২৭৫ বার পড়া হয়েছে