বদলি ও পিডি নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ
দপ্তর হারালেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব নিজাম উদ্দিন, প্রশাসনে আলোচনার ঝড়

রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নিজাম উদ্দিনকে তার পদের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আজ রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে।
মো. নিজাম উদ্দিন গত ৩০ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পদোন্নতি পেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি উঠেছে যে, তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করেননি এবং যোগ্যতাহীন ব্যক্তিদের পদে নিয়োগ দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু অযোগ্য ব্যক্তিকে পিডি পদে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের পদে নিয়োগের পূর্ব শর্ত হিসেবে উল্লেখ আছে যে, প্রকল্প শেষ হওয়ার ছয় মাস পরও চাকরির মেয়াদ থাকতে হবে, কিন্তু এ শর্তগুলোও তিনি উপেক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমান প্রশাসনে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মো. নিজাম উদ্দিনের নিয়োগ ও বাদ পড়াকে কেন্দ্র করে। সাম্প্রতিককালে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নিজাম উদ্দিনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তার এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছিল, যেখানে অনেকেই তাঁর পদোন্নতি বাতিলের দাবি দিচ্ছিলেন। অবশেষে, চার মাসের মধ্যেই এই নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে, নিজাম উদ্দিনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় তথ্য অনুযায়ী, নিজাম উদ্দিনের অতীত কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে সামনে এসেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদে আবু হেনা মোরশেদ জামানের দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের পর তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ওএসডি অবস্থায় ছিলেন। শূন্য পদটির জন্য তিন মাসের মধ্যে এতো আলোচনা সত্ত্বেও ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। এ সময়, বিভিন্ন কর্মকর্তা সচিব পদে নিয়োগের জন্য লবি বা তদবির করার চেষ্টা চালান।
শেষ পর্যন্ত, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে স্থানীয় সরকার বিভাগের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নিজাম উদ্দিনের নিয়োগের পর থেকেই বিভিন্ন অধিদপ্তরে নিয়োগ-বদলির অবৈধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠে এসেছে। তার বিরুদ্ধে সহকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক মতামত প্রচুর, যা তার প্রশাসনিক পদক্ষেপকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
দুর্নীতির অভিযোগের খবর ছড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও দায়িত্বশীল সরকারি জবাবদিহির চাপে নিজাম উদ্দিনের নিয়োগ বাতিল করা হয়। অতীতে নিজাম উদ্দিন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন এবং সাধারণভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি একজন ছাত্র হিসেবে মেধাবী হলেও প্রশাসনে সুসংহত সুনাম তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ সকল ঘটনায় প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং বর্তমান সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সচিব পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার অদৃশ্য নীতিমালা এবং লবিং ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মো. নিজাম উদ্দিনের নাম।
প্রশাসনে এখন বিশেষ আলোচনা ও আলোচনা চলছে মো. নিজাম উদ্দিনের জটিল পরিস্থিতি নিয়ে। গত জুলাই মাসে সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরণের সাথে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত অতিরিক্ত সচিব মো. নিজাম উদ্দিনকে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তার এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত, মাত্র ৪ মাস পর, তার নিয়োগ বাতিল করা হয়।
মো. নিজাম উদ্দিনের পদোন্নতি ও নিয়োগ বাতিলের পেছনে রয়েছে গোয়েন্দা তথ্যাদি। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণ জানানো হয়নি। ২৪ মার্চে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে স্থানীয় সরকার বিভাগের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর মো. নিজাম উদ্দিনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। এর আগেও, ৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের আগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান দুর্নীতির অভিযোগে অকার্যকর অবস্থায় থাকেন।
প্রশাসনের এই নেতিবাচক পরিস্থিতি ঘটনার তদন্তে যাওয়ার পর রিপোর্ট করা হয়েছে যে, মো. নিজাম উদ্দিন যেন অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্য দিয়ে চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি বিভিন্ন কর্মস্থলে ঘুষের ঘটনা ঘটিয়েছেন। জানা গেছে, তিনি ছাত্র জীবন থেকেই বিতর্কিত।
নিয়োগ বাতিলের বিষয়টি প্রশাসনের মধ্যে স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গির আওতার বাইরে থাকা একটি দৃশ্যমান ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং বিভিন্ন কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। ছিলো দীর্ঘ সময় ধরে পদটি খালি, যা প্রশাসনের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। এ সময় স্থানীয় সরকার সচিবের পদে কোন প্রার্থীর নাম উঠে আসেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মো. নিজাম উদ্দিন পদোন্নতির সময় এসিল্যান্ড ও বিআরটিএতে কাজ করেছেন। তবে তার চাকরি জীবনের অন্যান্য পদায়নে তিনি দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেননি। বরং বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে চাকরি থেকে সরে যেতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে অভিযুক্ত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে যেহেতু তিনি সরকারী কর্মকর্তাদের মাঝে সুবিধা পেতে 'আওয়ামীপন্থি' পরিচয় ধারণ করেছেন।
সংক্ষিপ্ত যোগাযোগের মাধ্যমে মূলত পদোন্নতি করার জন্য অনেকেই তাকে বাতিলের পেছনে ঠিক আছেন। তবে, যেহেতু এ ধরনের নিয়োগের বিষয়ে সাধারণজনের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। নিজাম উদ্দিনের ক্ষমতা আর তার ইতিবাচক পরিচয় এখন প্রশ্নবিদ্ধ। মোটকথা, তার নিয়োগ বাতিল শুধুমাত্র একটি ব্যক্তি নয়, বরং পুরো প্রশাসনের বিষয়ে একটি আলোচনার সূচনা করেছে।
স্থানীয় সরকার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিযোগগুলি অত্যন্ত গম্ভীর এবং তদন্তের বিষয়বস্তু। তারা সতর্ক করে দিয়েছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজের সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত নজরদারি এবং প্রতিবেদন অত্যাবশ্যক। এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা ও ধারাবাহিকতা লক্ষ্য রাখার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কোন কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি, তবে পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা সরকারের কাছে প্রত্যাশিত।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামাল উদ্দিনকে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব পদে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. হামিদুর রহমান খানকে সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ববর্তী দপ্তরে পুনঃনিযুক্ত করা হয়েছে।
১৬৪ বার পড়া হয়েছে