যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে বিপাকে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা

রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫ ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আগামী ৯ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হতে যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আদেশ।
তবে, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা এখনও নিশ্চিত নন, নতুন শুল্ক আরোপের পর তাদের শুল্ক হার কতটা বাড়বে এবং তা বর্তমান শুল্কের সঙ্গে যোগ হবে নাকি প্রতিস্থাপন হবে।
২ এপ্রিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে, এই আদেশে পণ্যভিত্তিক শুল্কের কোনো নির্দিষ্ট তালিকা বা কাস্টমস গাইডলাইন উল্লেখ করা হয়নি, ফলে বাংলাদেশে পোশাক রপ্তানিকারকরা বিভ্রান্তিতে আছেন।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের ওপর গড় শুল্ক ১১.৫৬ শতাংশ। যদি নতুন ৩৭ শতাংশ শুল্ক যোগ করা হয়, তবে মোট শুল্ক ৪৮.৫৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০ ডলারের একটি টি-শার্ট বা জিন্স রপ্তানি করা হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি শুল্ক হবে প্রায় ৪৯ ডলার, যা আগে ছিল মাত্র ১১.৫৬ ডলার।
দেশের অন্যতম বৃহৎ ডেনিম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, "আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, কারণ ট্রাম্পের আদেশে এটি অতিরিক্ত শুল্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ৯ এপ্রিলের আগে কিছু নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।"
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই শুল্ক আদেশের মাধ্যমে নির্ধারিত শুল্কগুলো অতিরিক্ত, তবে তারা দেশ বা পণ্যভিত্তিক বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, "আমরা এখনও স্পষ্ট না। এটি ৩৭ শতাংশ হতে পারে, অথবা যদি বর্তমান মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) হারের সঙ্গে যোগ হয়, তবে তা ৫২ শতাংশেও পৌঁছাতে পারে, যা বর্তমানে বাংলাদেশি পণ্যে অনেক ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশের বেশি।"
অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির জানান, তার প্রতিষ্ঠান এখনও হালনাগাদ ট্যারিফ তথ্য পায়নি, তবে বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে যে নতুন শুল্ক হার বর্তমান শুল্কের সঙ্গে যোগ হতে পারে বা প্রতিস্থাপন হতে পারে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, "একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ব্র্যান্ড ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে, নতুন শুল্ক ৪৮.৫৬ শতাংশ হতে পারে।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন এই নীতি বিশ্বব্যাপী পোশাক রপ্তানির শুল্ক পরিবর্তন করবে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের পোশাকের শুল্ক ৬৫.৫ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৫৭.৫ শতাংশ, ভারতের ৩৮.৪৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩.৪৫ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৬০.৭ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৪১.৪৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির বাজারে বাংলাদেশ বর্তমানে ৯ শতাংশ শেয়ার দখলে রাখে, এবং বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ২৪ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে হয়ে থাকে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ৭.৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা চীন ও ভিয়েতনামের পর তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এ বিষয়ে রপ্তানিকারকরা ও নীতিনির্ধারকরা একমত যে, এখনই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। শরীফ জহির বলেন, "আমরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা রাখি, তবে যদি অন্য দেশগুলো শুল্ক হার কমিয়ে দেয়, তবে আমরা দ্রুত বাজার হারাতে পারি।"
বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং রপ্তানিকারকরা আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন। প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "অন্য দেশ ইতোমধ্যে আলোচনায় বসেছে। আমাদেরও দ্রুত এই কাজ শুরু করতে হবে এবং কার্যকর ফলাফল বের করার চেষ্টা করতে হবে।"
১২৯ বার পড়া হয়েছে