ঈদের ছুটিতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড়

শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৫ ৭:৪৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহার হিসেবে পরিচিত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারটি নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত।
নওগাঁ শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে এই বিখ্যাত স্থানটির অবস্থান। এটি পূর্বে ‘সোমবার বিহার’ নামে পরিচিত ছিল।
এবারের ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের ছুটিতে দর্শনার্থীদের প্রবাহ একেবারে উপচে পড়েছে। পরিবার, বন্ধুবান্ধবসহ অনেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে এসেছেন। এই সময়ে অনেককেই সেলফি তুলতে দেখা গেছে, আর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল যথেষ্ট সুদৃঢ়। দর্শনার্থীরা বিহারের চারপাশ ঘুরে ঈদের উৎসব উপভোগ করছেন।
ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মূল প্রবেশদ্বারটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। দক্ষিণ দিকে প্রবেশদ্বারের পাশে প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী ও বই রয়েছে। উত্তর পাশের কক্ষে টিকিট কাউন্টার, মহিলা এবং পুরুষ টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, এখানে অফিসারদের জন্য কোয়ার্টার, আনসার কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টারও রয়েছে। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য ১০টি ছাউনি তৈরী করা হয়েছে, যেখানে ক্লান্তরা বিশ্রাম নিচ্ছেন।
এছাড়া, এখানে একটি পুকুর, মনোরম পরিবেশে তৈরি পাথওয়ে, বসার স্থান এবং গাড়ী পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। পিকনিক কর্নারের কাছে একটি ব্রিজ রয়েছে যা সরাসরি বৌদ্ধ মন্দিরের প্রবেশপথে যায়। মন্দিরের প্রধান ফটকসহ তিনটি ব্রিজ এবং কাঠের সিঁড়ি মন্দিরের চূড়ায় উঠতে সাহায্য করে। এসব দৃশ্য দর্শনার্থীদের মন ভরিয়ে তোলে।
ঈদুল ফিতরের দিনগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে আসেন। হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য দোকানগুলোও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নানা সাজে সজ্জিত হয়েছে। এক দোকানি জানান, গত সপ্তাহে ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন ২০-৩০ হাজার দর্শনার্থী আসছিলেন।
ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার ডাবরি গ্রামের বনি আমিন ও রওনক জাহান দম্পতি বলেন, "আমরা ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে পাহাড়পুর এসেছি এবং এখানে এসে খুবই আনন্দিত।" রোকাইয়া আক্তার সিন এবং লুৎফুন নাহার স্মৃতি বলেন, "এটা আমাদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা, পাহাড়পুরের নতুন পরিবেশ দেখে খুব ভালো লাগছে।"
১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার করেন, এবং ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটি এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। প্রায় ৭০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বিহারটি ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের ধর্মীয় চর্চার কেন্দ্র ছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে বৌদ্ধরা এখানে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে আসতেন।
ঈদের ছুটিতে এখানে ব্যাপক দর্শনার্থীর সমাগম হয়। এটি এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারকে ঘিরে সরকারি উদ্যোগে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে আরো বেশি দর্শনার্থী এই ঐতিহাসিক স্থানটি উপভোগ করতে পারেন।
এছাড়া, নওগাঁর অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলিও ঈদে ব্যাপক দর্শনার্থী আকর্ষণ করেছে, যেমন কুসুম্বা মসজিদ, আলতাদীঘি শালবন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পতিসর কাচাড়ীবাড়ী ইত্যাদি।
১২৭ বার পড়া হয়েছে