নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন ‘বিভ্রান্তিকর ও একপক্ষীয়’: প্রেস উইং

মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫ ৪:০৩ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নিয়ে একটি ‘উদ্বেগজনক ও একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি’ উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে অতিসরলীকরণ করে এবং ১৮ কোটি মানুষের জাতিকে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করার আশঙ্কা তৈরি করে বলে মনে করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, ভুল চিত্র তুলে ধরে এমন নির্দিষ্ট উদাহরণের ভিত্তিতে গত এক বছরে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি হয়েছে এবং পরিস্থিতির জটিলতা বুঝতে চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদনে ধর্মীয় উত্তেজনা এবং রক্ষণশীল আন্দোলনের কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলেও এর পেছনের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের প্রতি একেবারেই উদাসীনতা প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সরকার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নারীদের অধিকার ও অবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি এমন একটি সরকার যা নারীর অধিকার এবং নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকারে রেখেছে। প্রতিবেদনের আঙ্গিক বাস্তবতার বিপরীতে অবস্থান করছে, যা হতাশাজনক।
এছাড়াও, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ‘চরমপন্থি শক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি’ বলে যে দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, তা শুধুমাত্র মিথ্যা নয় বরং তার নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধেও। প্রফেসর ইউনূস নারী অধিকারের পক্ষে তার ধারাবাহিক অবদান রেখেছেন এবং তিনি নারী ক্ষমতায়নের বিষয়ে অত্যন্ত নিবেদিত ছিলেন, যা তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে।
জানানো হয়েছে, প্রতিবেদনটি ধর্মীয় সহিংসতার বিষয়ে ভুল ধারণা উপস্থাপন করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ধর্মীয় সহিংসতার মধ্যে পার্থক্য করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়ের পর বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতগুলোর অনেককেই ভুলবশত ধর্মীয় সহিংসতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যদিও এই ঘটনাগুলি মূলত রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করে, যা বিষয়টিকে জটিল করে তোলে।
এই সবকিছুকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হিসেবে উপস্থাপন করা বিভ্রান্তিকর, কারণ এতে প্রকৃত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলো উপেক্ষিত হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রক্ষার অঙ্গীকার করেছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে কাজ করছে। সামাজিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উগ্রবাদ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
প্রেস উইং জানিয়েছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এশিয়ার একটি অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে, যা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ব্যাপক সুযোগের অফার করে। দেশের অর্থনীতি গত কয়েকমাসে স্থিতিশীল ও গতিশীলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীকালের দিকে তাকালে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পরিশেষে, বাংলাদেশের প্রগতির ইতিহাস, গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার এবং নারীর ক্ষমতায়নের দৃঢ় প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দেশ এগিয়ে যাবে। নেতিবাচক কিছু ঘটনা দ্বারা পুরো সমাজকে সংজ্ঞায়িত করা দ্বিধাজনক, বরং আমাদের বাংলাদেশের অগ্রগতি, স্থিতিশীলতা এবং দৃঢ়তার বড় ছবিটি গ্রহণ করা উচিত।
১১৫ বার পড়া হয়েছে