স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বান্দরবানের ১৬ গ্রামে

শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫ ৯:০৭ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
এলাকার ৫৩ বছরের স্বাধীনতা অর্জনের পরেও এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছেনি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ১৬টি দুর্গম গ্রামে।
এই গ্রামগুলোর মানুষজন নানা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস হলেও, তারা এখনও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা এখনও বিদ্যুৎ, পানীয় জল, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো মৌলিক সুবিধাগুলোর অভাবে দুর্বিষহ। এসব গ্রামে সড়ক যোগাযোগের উন্নতি হলেও, আরও অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে আছে, যার ফলে গ্রামবাসীরা নানা সমস্যায় পড়ছেন।
এই ১৬টি গ্রামের মধ্যে রয়েছে ব্যঙছড়ি বড় পাড়া, অংজাই পাড়া, ব্যঙছড়ি নতুন, ব্যঙছড়ি বাজার, ব্যঙছড়ি ত্রিপুরা, ব্যঙছড়ি মুনয়ার বম, ব্যঙছড়ি খাবেহ, ব্যঙছড়ি রেদো, ব্যঙছড়ি পূর্ণবাসন, সিমন, রায়চন্দ্র ত্রিপুরা, শুকনা ঝিড়ি, কয়াল বম, সঙ্খমনি, তারাছা ত্রিপুরা, এবং লুলাইং বম পাড়া। এই গ্রামগুলোর অধিকাংশই প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো, কিন্তু আজও এসব গ্রামের মানুষ আধুনিক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা খুবই অপর্যাপ্ত এবং অধিকাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য সোলার বা হারিকেনের আলোতে নির্ভরশীল।
এই এলাকায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন—মারমা, ত্রিপুরা, বম ও তংচঙ্গ্যা। তারা মূলত বাঁশ, গাছ এবং জুম বাগানের ওপর নির্ভরশীল। তবে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গীর্জা এবং বৌদ্ধ উপাসনালয় রয়েছে, তবে এগুলোতেও আলোর অভাব, এবং শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে সমস্যায় পড়ছেন।
এলাকার মানুষেরা জানান, বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু নির্বাচনের পর তারা আর কোনো কার্যক্রম হাতে নেননি। এলাকার একমাত্র সড়কটিও বছরের পর বছর অবহেলায় পড়ে থাকার কারণে গ্রামবাসীরা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। গ্রামে স্কুলবিমুখ শিশুদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এলাকার বাসিন্দা উথোয়াই প্রু মারমা বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকে গ্রামে কোনো উন্নয়ন হয়নি, বিদ্যুৎ তো দূরের কথা, মানুষরা এখনো সোলার বা হারিকেনের আলোয় জীবনযাপন করছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, তারা চান যেন এই অঞ্চলে সরকারী উদ্যোগে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা জানিয়েছেন, ব্যাঙছড়ি এলাকার জন্য কয়েকটি প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়েছে, তবে সরকারের পরিবর্তন হওয়ার কারণে সেসব কাজের অগ্রগতি স্থগিত হয়ে আছে। তিনি আশাবাদী যে, দ্রুত উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে।
এলাকার জেলা পরিষদের সদস্য নাংফ্রাং খুমী জানান, ‘‘আমি এখনো সেখানে যাইনি, কিন্তু পরিদর্শন করতে যাব।’’
এভাবেই, এই পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে তীব্র দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে গ্রামের বাসিন্দারা, এবং তারা আশাবাদী যে, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কোনো সমাধান আসবে।
১৫৮ বার পড়া হয়েছে