ইঁদুরের বাণিজ্যিক খামার, শরীয়তপুরে ব্যতিক্রমী কর্মসংস্থান

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫ ৬:৩১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
লাবণী আক্তার, যিনি শরীয়তপুর পৌর শহরের বালুচরা এলাকায় বসবাস করেন, পড়াশোনা শেষে বিয়ে করার কারণে ঘর-সংসারে বেশি সময় দেওয়া শুরু করেন।
তবে শিক্ষাজীবনের পর চাকরি নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন যে, বিশেষ কিছু করতে পারেননি। তখন তাঁর মাথায় আসে ইঁদুর পালন করার উদ্যোগ।
গত বছরের জুন মাসে তিনি ঢাকার কাঁটাবন থেকে সুইচ অ্যালবিনো জাতের দুই জোড়া ইঁদুর কিনে ঘরে নিয়ে আসেন এবং সেগুলোকে এক ছোট খাঁচায় লালন-পালনে শুরু করেন। মাত্র ২০ দিনের মধ্যে সেগুলো ১৮টি বাচ্চা দেয়। এরপর বড় পরিসরে ইঁদুর পালন করার ভাবনায় ঢাকায় ব্যবসা করা স্বামী রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করেন। তিনি উৎসাহিত করেন এবং লাবণী বাড়ির একটি ঘরে ইঁদুর পালনের কাজ শুরু করেন।
লাবণীর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, “আমার পড়াশোনাকালে দেখেছি ল্যাবে ইঁদুর কত বেশি ব্যবহার হতো। সেই সময় বেকার জীবন নিয়ে আমি বিরক্ত বোধ করছিলাম। একদিন হঠাৎ করে ইঁদুর পালনের ভাবনা মাথায় এল। ঢাকায় দুই জোড়া ইঁদুর সংগ্রহ করার পর দ্রুতই তারা বাচ্চা দিতে শুরু করে, যা লালন-পালনে কম সময় ও খরচে চলে। আট মাসের মধ্যেই বুঝতে পেরেছি এ ব্যবসা লাভজনক।”
বর্তমানে লাবণীর খামারে শিশু জন্মদানের উপযুক্ত ৮০টি ইঁদুর রয়েছে এবং বিক্রির জন্য প্রস্তুত ২৮০টি ইঁদুর আছে। সাধারণত একটি মা ইঁদুর একসঙ্গে ১০ থেকে ২০টি বাচ্চা দেয় এবং প্রতি মাসে এভাবেই নতুন বাচ্চা প্রসব করে। লাবণী জানালেন, যখন ইঁদুরের ওজন ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম হয়, তখন তা বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়। প্রতি ইঁদুরের বাজার মূল্য ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
ইঁদুরগুলোকে প্রতিদিন সকালে ধান, গম ও ভুট্টা মিশ্রিত খাবার দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় পরিবারের রান্না করা অটুট খাবারের উচ্ছিষ্টও ইঁদুরদের খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। অভিযোগ থেকে জানা গেছে, একজন ইঁদুরের বিকাশের পুরো প্রক্রিয়ায় ১৫ থেকে ২০ টাকার খাবার ও পরিচর্যা প্রয়োজন হয়।
লাবণী নারায়ণগঞ্জের একটি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে তাঁর ইঁদুর বিক্রি করেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৩৫০টি ইঁদুর বিক্রি করেছেন। ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল আকাশ জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে ইঁদুরের প্রকল্প রয়েছে। তিনি সেখানে ইঁদুর সরবরাহ করেন।
লাবণীর স্বামী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “লাবণী আমাদের দুই সন্তান এবং মা-বাবার সঙ্গে গ্রামে বাস করে। তাঁর এই উদ্যোগে যোগ দিয়ে আমি অত্যন্ত খুশি। ভবিষ্যতে তাঁরা আরও বড় খামার তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করতে চান, কেননা এটি একটি লাভজনক ব্যবসা।”
১৪৬ বার পড়া হয়েছে