৪ মাস ধরে অকার্যকর হয়ে আছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫ ৬:০৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গত চার মাস ধরে অকার্যকর হয়ে রয়েছে, যার ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ভুক্তভোগীরা জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, সেই সরকারের অধীনে গঠিত কমিশনটি নভেম্বরে পর্যন্ত কার্যকর ছিল। ৭ নবেম্বরে কিছু গোয়েন্দা কর্মকর্তা কারওয়ান বাজারে কমিশনের কার্যালয়ে পৌঁছান এবং সেখানেই দিনভর অবস্থান করেন। তখনকার চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমদ, সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, এবং অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতির মধ্যে নিয়ে আলোচনা হয়। পরবর্তীতে, কাওসার আহমেদ নামক এক সদস্য পদত্যাগ করেন।
মানবাধিকার কমিশনের আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন সদস্যদের নিয়োগের আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি মনে করছেন, মাসখানেকের মধ্যে নতুন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকারকর্মীদের সংগঠন সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের (সাহার) বাংলাদেশ ব্যুরোর সদস্য সাঈদ আহমেদ হতাশা প্রকাশ করেছেন, কারণ চার মাসে নতুন কমিশন গঠিত হয়নি। তিনি বলেন, এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার কমিশনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন-২০০৯ অনুযায়ী এই কমিশন গঠনের জন্য ১ জন চেয়ারম্যান, ১ জন সার্বক্ষণিক সদস্য এবং ৫ জন অবৈতনিক সদস্য প্রয়োজন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে এই কমিশনের সরাসরি দণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা নেই তবে লঙ্ঘনের বিষয়গুলোতে সুপারিশ করার ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে কমিশনকে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি।
বর্তমানে, কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের অভাবে অভিযোগ জমা দেওয়ার সিস্টেমও স্থবির হয়ে পড়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহকারী পরিচালক মোজাফফর হোসেন জানিয়েছেন, অভিযোগগুলো শুধু রক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।
মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মতে, গত বছরের আগস্ট থেকে এই বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১২১ মানুষ নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, অতীতে গণপিটুনির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত বছর। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আক্রান্ত হয়েছে।
এখন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনও বক্তব্য রাখছে না। অভিযোগ রয়েছে, মানবাধিকার কমিশন গঠনে দেরির কারণ হচ্ছে এসব লঙ্ঘনকে উপেক্ষা করা। মানবাধিকারকর্মী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেছেন, এত দিন ধরে কমিশন অকার্যকর থাকা অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত এবং এটি দুর্ভাগ্যজনক যে কমিশন কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
১১৫ বার পড়া হয়েছে