কপিরাইট পরিদর্শক আতিকুজ্জামান-জাহিদের সম্পদের পাহাড়

শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫ ১:১৫ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
দূর্নীতিবাজ কপিরাইট পরিদর্শক মো. আতিকুজ্জামান কপিরাইট অফিসের সাবেক রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরির সময়ে সরকারি নিয়ম নীতি না মেনে রাত ১০টা পর্যন্ত অফিস করত।
জাফর রাজা চৌধুরী কে সে ম্যানেজ করে কপিরাইট বোর্ড ও কপিরাইট সংক্রান্ত অভিযোগের নথির দায়িত্ব বাগিয়ে ও পরবর্তীতে অফিস আদেশ করে নেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর শুরু হয় তার ঘুষ ও দুর্নীতি বাণিজ্য।
তিনি বোর্ডে আপিল মামলার বাদি ও বিবাদী উভয়ের নিকট থেকেই ঘুষ খাওয়া শুরু করেন। দূর্নীতিবাজ আতিকুজ্জামান শুনানীর পুর্বেই আদেশ দিয়ে রায় কী হবে- বলে দিত। তখন ক্লায়েন্টরাও তাকে মোটা অংকের সেলামি দিত। শুধু তাই নয় কপিরাইট সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মের কপিরাইট করিয়ে দেয়ার জন্য সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্য করে আসছেন।
বিশস্ত সূত্রে জানা যায়, আতিকুজ্জামান এখন নামে, বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক। কপিরাইট অফিসের দুর্নীতিবাজ মো. আতিকুজ্জামান ১৪তম গ্রেডের একজন কর্মচারী হয়ে তিনি সাভারের কাউন্দিয়ায় আমিনুল ইসলামের নিকট থেকে ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের বাগান বাড়িসহ সেমি-পাকা বাড়ি ক্রয় করেছেন।
এছাড়া তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার। তার ট্যাক্স ফাইল এবং সম্পদ বিবরণী দেখলেই প্রমাণ মিলবে। তিনি গ্রামের বাড়িতে নামে বেনামে অঢেল সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। এসব সম্পদ তিনি ঘুষ বাণিজ্যের দ্বারা অর্জন করেছেন বলে জানা যায়।
সম্প্রতি মাইনুল ইসলাম নামক এক কপিরাইট সেবাগ্রহীতা কপিরাইট পরিদর্শক মো. আতিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হয়রানি করার জন্য একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। কিন্তু তারপরও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে আতিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। একচ্ছত্রভাবে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করায় উল্টো কপিরাইট অফিসের সৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই অপপ্রচার চালান। তার অনেক তথ্য-প্রমাণও এসেছে।
আতিক ঘুষের টাকা দিয়েই সব ম্যানেজ করে ফেলেন। সে পাল্টা নিউজ করবে ভেবে পূর্বে তার বিরুদ্ধে প্রমাণসহ অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সাহস হয় খোদ কপিরাইট অফিসের। এই কপিরাইট পরিদর্শক মো. আতিকুজ্জামানের ঘুষের টাকার কাছে কপিরাইট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ জিম্মি। কারণ তার বিরুদ্ধে কোনো কিছু বললেই তাদের বিরুদ্ধে নেমে আসে মিথ্যা নিউজের বেসাতি। পাঠাই লিগ্যাল নোটিশ। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও হয়রানি যেন আতিকের রক্তে।
আতিকুজ্জামান কপিরাইট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এসব অন্যায় কাজের বাস্তবায়ন ঘটান তার কলেজ জীবনের বন্ধু, আওয়ামীলীগ ক্যাডার কাজী শরিফুল শাকিলের মাধ্যমে। আর কাজী শরীফুল শাকিলের বিরুদ্ধে সম্মানিত মানুষের হয়রানি করার অভিযোগও আছে ভুড়ি ভুড়ি। শাকিল আর আতিকুজ্জামান সবাই ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। শাকিল ফ্যাসিবাদের দোসর পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের আস্থাভাজন। শাকিল বিয়ে করে হেলিকপ্টারে। সেই বিয়েতেও ছিল শিল্পমন্ত্রীর সরব উপস্থিতি।
ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার আতিকুজ্জামান কিছু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কাজী শরিফকে দিয়ে নামসর্বস্ব বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় নিউজ করিয়ে হয়রানি করছে। তার প্রমাণ মিলবে ফেসবুক আইডির ছবি দেখেই। এছাড়াও কাজী শরীফের অনলাইন পত্রিকার নাম ভয়েসবিডি২৪। এই পত্রিকার লোগো সম্বলিত টিশার্ট পরে এ অফিসের কয়েকজন কর্মচারীকে সহযোগিতা করছে। তারা হলেন মো. পেয়ার হোসেন, এ কে এম জাহিদ, মো. নুরুল ইসলাম ও মো. তাজেদুল ইসলাম। এদেরকে আইনের আওতায় আনলেই বেড়িয়ে আসবে থলের বিড়াল।
এই আতিকের হাত থেকে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাও রেহাই পাচ্ছে না ও ভবিষ্যতেও পাবে না। আর এ রকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মানুষ কপিরাইটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। আতিকুজ্জামানের দুর্নীতির কারণে কপিরাইট স্টেকহোল্ডাররা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কপিরাইট অফিসের কপিরাইট রেজিস্ট্রারকে সম্প্রতি বদলির আদেশ করা হয়েছে। তাই কপিরাইটের ডেপুটি রেজিস্ট্রার যাতে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব না পান সে জন্য মো. আতিকুজ্জামান কপিরাইট ডেপুটি রেজিস্ট্রারসহ (যুগ্মসচিব) কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও হয়রানিমূলক নিউজ প্রচার করছে।
এর কারণ আতিকুজ্জামান ভয়ে আছে যে, কপিরাইট ডেপুটি রেজিস্ট্রার যদি রেজিস্ট্রার এর দায়িত্ব পান তাহলে ওর রক্ষা নেই। ইতোমধ্যে কপিরাইট রেজিস্ট্রার আতিকুজ্জামানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন ও তার দুর্নীতির তদন্ত চলছে। তাই তিনি ডেপুটির বিরুদ্ধে মিথ্যা নিউজ করিয়েছে। এই দুর্নীতিবাজ আতিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করলে মন্ত্রণালয় ও কপিরাইট অফিসের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হবে ও ভবিষ্যতে কোন এডমিন ক্যাডারে অফিসে কাজ করতে আসবেন না।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বিভিন্ন সেবা গ্রহিতাদের নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করে থাকেন। তার মধ্যে লাইভ টেকনোলজির ইয়াসির আরাফাত, সাউন্ডটেক এর স্বত্বাধিকারী সুলতান মাহমুদ বাবুল, সংগীতার স্বত্বাধিকারী রবিন, জি-সিরিজ এর মোঃ খালেদ, সাইফুল ইসলাম, জনাব নজরুল ইসলাম, সিডি প্লাস এর আবিদ রশিদ, সিডি ভিশন এর মাহবুব, ঈগল মিউজিকের কচি আহমেদ, শেখ ফরিদ, বঙ্গবিডি, রকন উদ্দিন রুকু, জাজ মাল্টিমিডিয়া, মোঃ আব্দুর রউফসহ নাম নাজানা অনেক সেবা গ্রহিতার নিকট থেকে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এমন কি বর্তমান সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টার নিকট থেকেও আগে ঘুষ নিয়েছিলেন এই আতিকুজ্জামান। আতিকুজ্জামান এতোটাই বেপরোয়া যে, তার কথা না শুনলে জুনিয়র ও সিনিয়র কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ অপমানিত ও লাঞ্চিত হতে হয়। এখন তিনি প্রকাশ্যে বলে বেড়ান তার কথা না শুনলে যে কাউকেই সে গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধাবোধ করবে না। তাদেরকে মারার হুমকি দিচ্ছে। তার অত্যাচারে কপিরাইট অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না।
তিনি একজনের নথি গায়েব করে দিচ্ছেন, আর একজনের নথির কাগজপত্র গায়েব করে দিচ্ছেন। কপিরাইট অফিসের আর এক দুর্নীতিবাজ কপিরাইট সহকারী পরীক্ষক একে এম জাহিদ কপিরাইট অফিসে চাকুরি নিয়েছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে। তিনি তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই এর নির্দেশনা থাকলেও তিনি তার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি নিয়োগের সময়। তারপরও তিনি কিভাবে চাকুরি পেলেন তা বোধগম্য নয়। দুর্নীতিবাজ কপিরাইট সহকারী পরীক্ষক এ কে এম জাহিদ কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন শাখায় কাজ করেন। তার সুযোগ নিয়ে তিনি ঘুষ ও দুর্নীতি বাণিজ্য বহাল তবিয়েতে চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এখন কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ও অভিযোগের নথির শুনানি গ্রহণ করেন। এ কারণে তিনি ক্লায়েন্টের কাজ করিয়ে দিবেন বলে তাদের নিকট থেকে ঘুষ গ্রহণ করেন।
দুর্নীতিবাজ জাহিদ শুনানীর পুর্বেই আদেশ দিয়ে রায় কী হবে- বলে দিত। তখন ক্লায়েন্টরাও তাকে মোটা অংকের ঘুষ দিত। শুধু তাই নয় কপিরাইট সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মের কপিরাইট করিয়ে দেয়ার জন্য সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে হয়রানি ও ঘুস বাণিজ্য করে আসছেন। সম্প্রতি একজন প্রকাশক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে তা তদন্ত করে প্রমাণ পেয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এত কিছুর পরেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দুর্নীতিবাজ কপিরাইট সহকারী পরীক্ষক এ কে এম জাহিদও একজন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। তার প্রমাণ তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিগত ১২ ও ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে তার ফেসবুক পোস্টে আন্দোলন বিরোধী পোস্ট দিয়েছিল। এখন তিনি হয়ে গেছেন বিএনপির জাদরেল নেতা।
এছাড়াও এই দুর্নীতিবাজ কপিরাইট সহকারী পরীক্ষক এ কে এম জাহিদ দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। জানা যায়, তিনি গ্রামের বাড়িতে বিশাল গোডাউন করে লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল উক্ত গোডাউনে রেখে ব্যবসা করে। ঢাকাতে নামে-বেনামে একাধিক ফ্লাট কিনেছেন। কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বিভিন্ন সেবা গ্রহিতাদের নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করে থাকেন। তার মধ্যে প্রাণ গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, যুমনা গ্রুপ, কাজী গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপসহ নাম না জানা আরও অনেক কোম্পানির নিকট থেকে বিপুল পরিমান নগদ অর্থ গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও তিনি দাখিলকৃত অনেক ফাইল গায়েব করে দেন টাকার বিনিময়ে। এ কাজে সহযোগিতা করেন ফ্যাসিস্ট সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এর সুপারিশে আউটসোর্সিং এ নিয়োগপ্রাপ্ত তাজেদুল ইসলাম। তার দূর্নীতির প্রমানস্বরুপ একটি প্রমাণ হচ্ছে সম্প্রতি কয়েকটি সাহিত্য কর্মের দূর্নীতি করে টাকা খেয়ে পরীক্ষা না করেই অনুমোদন করার প্রস্তাবের কারণে তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। কপিরাইট অফিসে খোঁজ নিলে এসবের সত্যতা মিলবে। তিনি স্টেক হোল্ডারদেরকেও নানা ভাবে হয়রানি করছেন। একজনের দলিল জাল করে আর এক জনের সনদ দিয়ে দিচ্ছেন। পূর্বে আতিক ও জাহিদ কপিরাইট অফিসের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুয়া নিউজ প্রকাশ করে তাদের ব্যক্তিগতভাবে হয়রানি করেছে, যা তদন্ত করে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এই দুর্নীতিবাজ কপিরাইট পরিদর্শক মো. আতিকুজ্জামান ও কপিরাইট সহকারী পরীক্ষক একেএম জাহিদ এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের অপকর্মের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান না করলে কপিরাইট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগতভাবে হয়রানি ও লাঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি এ অফিসের ভবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে থাকবে।
১৫৪ বার পড়া হয়েছে