পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৬ বছর আজ: নেপথ্যের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবি

মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ৫:৫৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানী পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ১৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। এই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নির্দয়ভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন।
সরকার দিনটিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। শহীদ পরিবারসহ সকলেই অপেক্ষা করছে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের জন্য।
এ দিনটি উপলক্ষে আজ বনানীর সামরিক কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া এবং মিলাদ মাহফিলের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।
ক্ষমতার পরিবর্তনের পর এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত এবং ঘটনার মূল সত্য উদ্ঘাটনের দাবি উঠেছে। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকার হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করছে, কারণ এতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সংশ্লেষ থাকতে পারে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রও জড়িত ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ওই ঘটনার তদন্তের জন্য ২৩ ডিসেম্বর সাত সদস্যের একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে, যার নেতৃত্ব দেন বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক আ ল ম ফজলুর রহমান। কমিশন এতদিন অন্তত ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেছেন, তারা স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছেন। পিলখানার হত্যাকাণ্ডের মামলা ইতোমধ্যে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে রায় দেওয়া হয়েছে এবং আপিল বিভাগে এখনও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে এবং এখন পর্যন্ত ২৮৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৩ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে, ১৭৮ জন ইতোমধ্যে জামিন পেয়ে গেছেন এবং আরও ৩০০ জনের জামিন আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
সরকার ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যেখানে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ উপলক্ষে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকালে বনানীর সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক ও শহীদদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।
এদিকে, বিএনপি সারাদেশে বিডিআর বিদ্রোহের শিকারদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে বলেন, এই দিবসে তারা বনানীর সেনা কবরস্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দোয়া অনুষ্ঠান করবে, পাশাপাশি অন্যান্য জায়গায় জেলা ও মহানগর পর্যায়ে দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। ঢাকায় বিকেল সাড়ে ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, দিবসটি পালনের জন্য বিজিবির যেখানে রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন করা হয়, সেসব স্থানে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সকল সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবেন। পিলখানায় শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৯ সালের এই ভয়াবহ ঘটনার ফলে বিডিআর সদরদপ্তর পিলখানাসহ সারাদেশে বিদ্রোহ ঘটে, যার ফলে রয়েজেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা এবং নারী ও শিশুসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।
১৩৯ বার পড়া হয়েছে