'টক্সিক টেলিভিশন সাংবাদিকতা'

বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের সাহসী যোদ্ধা ন্যায়ের পথের সাংবাদিকরা কি পাচ্ছেন সঠিক মূল্যায়ন? এই স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন সিনিয়র রিপোর্টার ও নিউজ প্রেজেন্টার জান্নাতুল ফেরদৌস মানু।
"এ জীবনে ৫টা টিভি চ্যানেলের কর্মী ছিলাম! সব থেকে দীর্ঘ সময় কেটেছে চ্যানেল ওয়ান ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে!
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে সিনিয়র রিপোর্টার ও নিউজ প্রেজেন্টার । পরবর্তীতে অনিচ্ছা সত্বেও জোর করে ডেপুটি অ্যাসাইমেন্ট এডিটর পদ চাপিয়ে দেয়া হয়! নিউজ বস খালেদ মহিউদ্দিন ভাই আমাকে ডাকতেন " জোয়ান অব আর্ক" বলে।
এই কর্মী জীবনে প্রথম কর্মস্থল চ্যানেল ওয়ানের নিউজ প্রধান নাজমুল আশরাফ ভাই নতুন গড়ে তোলা বেস্ট ৬/৭ জনের টিমে আমাকে রাখেন। বলতেন" সফট স্টোরি মাস্টার"। শেষের দিকে অনেক সনয়ই আমার স্ক্রিপট এডিট করতেন না। বলতেন ভয়েস দিয়ে দাও!
বৈশাখী টিভি ছেড়ে আসার সময় মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ভাই বলেছিলেন - "তোমার মত রিপোর্টার চলে যাক আমি চাই না! কিন্তু যেহেতু ভালো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছো বাধাও দেব না "।
সারাবাংলায় নিউজরুমে পা দিয়েই সাঈদ ইশতিয়াক রেজা ভাই ডাক ডাক ছাড়তেন - কি খবর" Newsroom Mother"
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রধান মোমেন ভাই রিপোর্টাস মিটিংয়ে একটা সময় বলতেন- 'তোমরা মানুর মত অ্যাকটিভ হও, ওর মত ব্রেকিং নিউজ দাও!'
নিজের সম্পর্কে এতো পজিটিভ মুল্যায়ন থাকার পরও.... ফোর্সড রিজাইনড এই আমি.....ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি জানালো - খারাপ পারফরম্যান্স, তাই চাকরি ছাড়তে হবে....
৫ বছর পারফরম্যান্সে টপ লিস্টে থাকা আমাকে চাকরি ছাড়তে হলো চট্রগ্রাম প্রতিনিধি মামুন আবদুল্লার একক সিদ্ধান্তে। সালমান এফ রহমানের ইচ্ছায় সবর্ময় ক্ষমতা নিয়ে নিউজরুমের হর্তাকর্তা হয়ে আসে তখন মামুন। আমাদের অনেকের চাকরি খান অন্যায় অযৌক্তিক ভাবে....না জানা কারণে।
আমি ছাড়া সে সময় এই অন্যায়ের প্রতিবাদ কাউকে করতে দেখেনি। কেবল নঈম তারিক ভাই অযোগ্য মামুনের অধীনে কাজ করবেন না বলে চাকরি ছাড়েন। খোদ খালেদ মহিউদ্দিন ও নিজের চাকরি বাঁচাতে মুখে তালা দেয়া তখন। মেধাবী মানুষরা স্বার্থপর হবেন... এটাই স্বাভাবিক!! কিংবা মামুন সালমান এফ রহমানের লোক, তাই ঘাটাতে চাননি হয়তো।
৫ আগস্টের আগে টক শো-তে আওয়ামী সরকারের পক্ষে মামুন জোরালো নগ্ন বক্তব্য,দিতেন নিয়মিত। টিভিতে অনেক বিপ্লব হল... সংস্কারের নামে আওয়ামী সমর্থক কর্মীদের জায়গায় বিএনপি পন্থীরা ছড়ি ঘোরাচ্ছে। প্রচুর নতুন নিয়োগ চলছে....কিন্ত চট্রগ্রামের মামুন আব্দুল্লারা এতো অন্যায় করেও বহাল তবিয়তেই আছে...নতুন পরিচয়ে নতুন মোড়কে....সংস্কারের আড়ালে...
আচ্ছা এই যে আপনারা আমার এতো প্রশংসা করতেন। দিন রাত গাধার মত খাটালেন... আপনাদের জন্য নিজের ব্যক্তিগত জীবন উড়িয়ে দিলাম কিন্তু কি হলো!!
এই আমার খোঁজ কোনদিন তো নিলেন না আপনারা!! জানতে চাইলেন না এতো বছর ধরে আঁকড়ে থাকা পেশাটাকে কেন ছেড়ে আসলাম?
আপনাদের জন্যই আজ এই পেশার এই হাল! যদি নিজেদের মেরুদণ্ডটা, নীতিটা সোজা রাখতেন... কেবল নিজেরটা না বুঝতেন... সিনিয়র জুনিয়র সম্পর্কটা মজবুত রাখতেন, দল মতের বদলে পেশাদারিত্ব টিকিয়ে রেখে একে অন্যের পাশে থাকতেন, অন্যায় হলে সবাই এক থাকতেন! কেবল ' সাংবাদিক ' পরিচয়েই বাঁচতেন।
আফসোস!! সব শেষ হয়ে গেল আপনারা একই রকম থাকলেন....সেই গ্রুপিং, সেই লোভ, সেই বেহায়াপনা, সেই চাটুকারিতা, সেই ক্ষমতাবানদের স্তুতি....
ভালবাসার পেশা তাই কষ্ট হয়... সাংবাদিকদের গালি দিলে নিজের গায়ে এসে লাগে...
যোগ্য সাহসী সাংবাদিকদের নেতৃত্বে ফিরে আসুক সুদিন! সাংবাদিকতা থেকে বিদায় নিক ব্যবসায়ী মামুন আবদুল্লারা.....।"
১৫৫ বার পড়া হয়েছে