বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘স্কিন ব্যাংক’

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘স্কিন ব্যাংক’। এটি গুরুতর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন আশার সৃষ্টি করেছে।
বর্তমানে চারজন দাতার চামড়া ব্যবহার করে দুজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি দেখা গেছে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ‘স্কিন ব্যাংক’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। চিকিৎসকরা আশা করছেন, এই উদ্যোগ গুরুতর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এখন পর্যন্ত ২ বছরের শিশু হামিদার শরীরে ৩৫২.৫ সেন্টিমিটার চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শিশুটির মা রাবেয়া বেগম জানান, গত ২২ ডিসেম্বর গরম পানিতে পুড়ে হামিদার শরীরের ৪২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং তার শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। ১৪ জানুয়ারি স্কিন ব্যাংক থেকে চামড়া প্রতিস্থাপন করার পর তার অবস্থা উন্নত হতে শুরু করেছে।
আরেকটি শিশু, ৮ বছরের মরিয়মের শরীরে ৭৭৯ সেন্টিমিটার পোড়া অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে স্কিন ব্যাংকের চামড়া দিয়ে। মরিয়মের মা মজেমা বেগম জানিয়েছেন, গ্যাসের চুলার আগুনে পুড়ে মরিয়মের শরীরের ২২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। স্কিন ব্যাংক থেকে চামড়া প্রতিস্থাপনের পর তার অবস্থায় উন্নতি হয়েছে।
স্কিন ব্যাংক কীভাবে কাজ করে?
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, গুরুতর দগ্ধ হলে শরীর থেকে দ্রুত পানি, লবণ, প্রোটিন ও তাপ বেরিয়ে যায়। যদি পোড়ার পরিমাণ বেশি হয় এবং রোগীর শরীর থেকে চামড়া নেওয়া সম্ভব না হয়, তখন স্কিন ব্যাংক থেকে সংরক্ষিত চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে এবং নতুন চামড়া তৈরি হতে সহায়তা হয়।
বিশ্বের অনেক দেশে স্কিন ব্যাংক একটি পরিচিত চিকিৎসা পদ্ধতি, যেমন সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভারতে এটি বহুদিন ধরে কার্যকরভাবে চালু রয়েছে।
চামড়া দান করার পদ্ধতি:
স্কিন ব্যাংকের কো-অর্ডিনেটর ডা. মাহবুব হাসান জানান, সুস্থ ব্যক্তি জীবদ্দশায় একাধিকবার চামড়া দান করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করা হয় এবং বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে চামড়া সংগ্রহ করা হয়। দাতা ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় না এবং ১৪ দিনের মধ্যে শরীরে নতুন চামড়া তৈরি হয়ে যায়।
মৃত ব্যক্তির থেকেও ৬ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব, যদি লাশ সংরক্ষিত থাকে। সাধারণত পিঠ ও পা থেকে চামড়া নেওয়া হয়।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মারুফুল ইসলাম জানিয়েছেন, চামড়া দানে আইনগত কোনো বাধা নেই এবং স্কিন ব্যাংক থেকে দান করা চামড়া সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে সংরক্ষিত ও প্রতিস্থাপিত হয়।
স্কিন ব্যাংকের ইনচার্জ তামান্না সুলতানা জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটে স্কিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ৮টি উন্নত প্রযুক্তির বিশেষ ফ্রিজের মাধ্যমে চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে স্কিন ব্যাংকের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হলে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা অনেক সহজ হবে এবং পর্যাপ্ত দাতার উপস্থিতিতে এটি গুরুতর দগ্ধ রোগীদের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
১২৪ বার পড়া হয়েছে