রূপকথা নয়, হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার দেখা মিলবে দেশেই

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ২:২১ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাঁশির সুর মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে এসেছে, যা যুগের পর যুগ ধরে প্রাণীজগতকেও আকৃষ্ট করেছে। সম্প্রতি, সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে এই বাঁশির সুরের জাদু নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে।
আর এই অদ্ভুত ঘটনার নায়ক হলেন ওসমান গনি মিন্টু, একজন সফল পাতিহাঁস খামারি।
ওসমান গনি মিন্টু একদিন মন খারাপ থাকাকালে মাঠে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করেন, তার খামারের হাঁসগুলো তার দিকে ছুটে আসছে। এই দৃশ্যটি তাকে ভাবতে বাধ্য করে, কেন না তিনি বুঝতে পারেন যে বাঁশির সুরে হাঁসগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করা সম্ভব। এরপর থেকে বাঁশির সুরে হাঁসগুলোকে আকৃষ্ট করে নিয়ে যাওয়ার এক অদ্ভুত প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি।
আজকের দিনে, ওসমান গনি মিন্টু বাঁশি বাজিয়ে তার খামারের শত শত পাতিহাঁসকে একসাথে করে নেন, তারা মাইলের পর মাইল পথ চলে তার পেছনে। এমন একটি দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা অবাক হয়ে যায়। কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে হাঁসদের সাথে তার এমন সফর দেখতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসছে।
মিন্টু এক সময় গরুর খামারে কিছু সমস্যা এবং প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শে তিনি নিজের বাড়িতে হাঁসের খামার গড়ে তোলেন। এখন তিনি মোবাইল ফোনে বাঁশির সুর বাজিয়ে তার হাঁসগুলোর খাবারের জোগান দেয় এবং খালে-বিলে হাঁসগুলোকে নিয়ে বেড়ান। সুরে সুরে হাঁসগুলো তার পেছনে চলে, যা গ্রামবাসীদের কাছে এক আকর্ষণীয় দৃশ্য হয়ে উঠেছে।
তিনি এখন 'হাঁস মিন্টু' নামে পরিচিত, এবং তার খামারের ১২০০ হাঁসের দল প্রতিদিন বিভিন্ন বিলে ঘুরতে যায়। তার এই হাঁস পালনের পদ্ধতি যুবকদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সমাজসেবক এবং অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, বেকার যুবকরা চাকরি খুঁজে না ফিরে, মিন্টুর মতো কৃষি খাতের দিকে মনোযোগ দিলে তাদের জীবনে সাফল্য আসবে।
এছাড়াও, নাসার বিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, মিন্টুর বাঁশির সুরে হাঁস চালানোর দৃশ্য দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন এবং তার সাথে এই পদ্ধতিতে ব্যবসা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, মিন্টুর হাঁস পালনের পদ্ধতি অত্যন্ত উদ্ভাবনী এবং এই পদ্ধতি যুবকদের আত্মনির্ভরশীল করতে সহায়তা করতে পারে।
এভাবে, ওসমান গনি মিন্টু তার বাঁশির সুর দিয়ে শুধু নিজের জীবনকেই পাল্টে দিয়েছেন, বরং আশেপাশের মানুষদেরও নতুন দিশা দেখিয়েছেন।
১৩৬ বার পড়া হয়েছে