লিবিয়ায় ২৩ জনের লাশ উদ্ধার
ঢাকা থেকে ইতালিতে ‘বডি কন্ট্রাক্টে’ ১৬ লাখ টাকার চুক্তি

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ৫:৫৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কুদ্দুস ব্যাপারী (৩৩) আগে মালয়েশিয়ায় ছিলেন। ছয় মাস আগে দেশে এসে দালাল মনিরের প্রলোভনে পড়েন এবং লিবিয়া হয়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই যাত্রার জন্য তাঁকে ১৬ লাখ টাকার ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ করতে হয়েছিল।
লিবিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশের এই পথ হল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, যেখানে অভিবাসীপ্রত্যাশীরা ছোট নৌকায় ঘনিষ্ঠভাবে বেঁধে যাত্রা করেন। এ পথে চলা অভিবাসীদের মধ্যে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান। দালালরা এই যাত্রার জন্য ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ নামক চুক্তি তৈরি করেন, যার আলোকে তাঁরা বেঁচে থাকলে জীবিত এবং মারা গেলে মৃতদেহও ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এই চুক্তির অধীনে দালালরা অভিবাসীদের সকল খরচ—যেমন খাবার, থাকার ব্যবস্থা, বিমান ভাড়া—ভার গ্রহণ করে।
কুদ্দুস ব্যাপারীর পরিবার জানিয়েছে, তাঁকে দালালের ধার শোধ করতে দুই বিঘা জমি ৪০ লাখ টাকায় দালাল মনিরের স্ত্রীর নামে লিখে দেন। কিন্তু লিবিয়াগামী এই যাত্রার পরে কুদ্দুসের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি, এবং পরিবারের আশঙ্কা, তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
কুদ্দুসের পাশাপাশি তাঁর ভগ্নিপতি সুজন হাওলাদার (৩৯)ও দালাল মনিরকে ১৬ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। মারাত্মক এই দুর্ঘটনায় সুজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তাঁর স্ত্রী মুন্নী বেগম।
সুজনের স্ত্রী জানান, “আমার স্বামীর সঠিক কোন খবর নেই। আমাদের দুই সন্তান রয়েছে, আর আমি বাবার বাড়িতে থাকি। দালাল মনির আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। তিনি আমাদের টাকা নিয়ে আমাদের স্বামীকে মেরে ফেলেছেন। আমি তার বিচার চাই।”
কুদ্দুসের বড় ভাই সোবাহান ব্যাপারী জানান, “আমার ভাই মালয়েশিয়ায় বেশ ভালো ছিলেন। দেশে এসে এই দালালের প্রলোভনে পড়ে টাকা এবং জমি দিয়ে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। এখন তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
দালাল মনির শেখ, যিনি রাজৈরের মজুমদারকান্দির হায়দার শেখের ছেলে, মানবপাচারের এই চক্রের প্রধান। তাঁর জামাতারা লিবিয়ার মাফিয়াদের সাথে যুক্ত। সম্প্রতি এই ঘটনায় ২৩ জনের লাশ ভেসে আসার পর থেকে মনির পরিবার সহ আত্মগোপনে চলে গেছে।
স্থানীয় এক দালাল জানান, “আমরা লিবিয়াতে বসবাসরত দালালের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করি। প্রথম ধাপে ১২ লাখ টাকা নেওয়ার পরে বাকি টাকা গেম দেওয়ার সময়ে মাত্র ৪ লাখ টাকা নেওয়া হয়।” অপর দালাল মিরাজ হাওলাদারও লিবিয়ায় মানবপাচারের সাথে জড়িত।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা বলেন, “মানব পাচার সংক্রান্ত মামলাগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে স্থানীয়ভাবে সম্প্রতি কোনো পরিবার মামলা করতে আসেনি। নিহত ও নিখোঁজ অভিবাসীদের তালিকা তৈরিতে পুলিশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
লিবিয়ায় এই মানবপাচারকারী ও তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্ত চলছে। পুলিশের আশ্বাস অনুযায়ী, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য আইনগত সহায়তা প্রদান করা হবে।
৩৪৭ বার পড়া হয়েছে