সর্বশেষ

সারাদেশ

সিন্ডিকেটেই জিম্মি মধুমতি নদীর গড়াই টোল প্লাজা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুর প্রতিনিধি

রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ১১:০৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ওপর দিয়ে যাওয়া বয়ে গেছে মধুমতি নদী। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত গড়াই টোল প্লাজার মাধ্যমে যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হয়। যা জমা হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।

কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কিছু অসাধু ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পুরো টোল প্লাজাটি নিয়ন্ত্রণ করতো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নামধারী ক্যাডাররা।

 

গত ৫ আগস্ট ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হলেও গড়াই টোল প্লাজাটি এখনো একই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। টেন্ডার থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। গড়ে তুলে নিজস্ব সুবিধাভোগী ও ক্যাডারবাহিনী। যে কারণে সিন্ডিকেটের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান শিডিউল কিনতে পারে না। ভয়-ভীতি আর হুমকির মাধ্যমে অন্যদের শিডিউল কেনায় বাধা দেয়া হয়। স্থানীয়রা ও বিগত স্বৈরাচারের আমলে বঞ্চিতদের এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সরেজমিনে তদন্ত করে সাংবাদিকরা।

 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অভিযোগকারীদের বক্তব্য সঠিক। একটি সিন্ডিকেটের কারণেই শিডিউল কেনায় অংশ নিতে পারছে না অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান। টোল প্লাজার টাকার সঠিক হিসেবেও দেয় না তারা। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর একরকম সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে ফ্যাসিস্টদের সিন্ডিকেটটি।

 

বঞ্চিতরা জানান, প্রতিবার একাধিক শিডিউল বিক্রি করা হলেও একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান শিডিউল কিনে জমা দিতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি অন্য ঠিকাদারদের ভীয়-ভীতি, হয়রানির হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিতর্কিত এই সিন্ডিকেটের কারণেই সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফরিদপুর মধুখালী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং অসৎ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চুয়াডাঙ্গার ড্যাফোডিল কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান একরকম জোরকরে গড়াই সেতুর টোল আদায় করেছে। নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করলেই নিজেরাই শুধু শিডিউল কিনে জমা দেয়। অন্যদের কোনো সুযোগ দেয় না তারা।

 

প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। জানা গেছে, তৌহিদুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা- ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের ডান হাত ছিলেন। ছেলুনের ৩৫ ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় আদালত এ আদেশ দেন।

 

বঞ্চনার শিকার এমনই একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রহমান এন্টারপ্রাইজ। যার স্বত্বাধিকারী মো. আশিকুর রহমান জানান, বিষয়টি লিখিতভাবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বরাবর জানানো হয়েছে। অনুলিপি পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। তারা চায়, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন এই ঠিকাদার।

 

আশিকুর রহমান আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা। সবাইকে শিডিউল কেনার সুযোগ দেয়া। যাতে যোগ্যরা টোল আদায়ের কাজ পায়। তিনি আরও বলেন, সবার অংশগ্রহণ থেকে বাছাই করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হোক গড়াই টোল প্লাজার কাজ। প্রতিবছরই বড় অংকের রাজস্ব পাবে সরকার। আশিকুর রহমানের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার দাবি, সিন্ডিকেট ভেঙে নতুন করে গড়াই টোল প্লাজার টেন্ডার আহ্বান করা হোক।

 

এ বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।

 

ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর-মাগুরার সীমান্তবর্তী মধুমতি নদীর ওপর গড়াই সেতু (কামারখালী ব্রিজ নামে পরিচিত) নির্মাণ করা হয়। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী উপজেলার আড়পাড়া এলাকায় অবস্থিত টোল ঘরে সেতুটির টোল নেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণের পর থেকেই প্রায় ৩১ বছর যাবৎ ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করে থাকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

৩৪০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন