সাভার গণহত্যা: হাসিনা পালানোর পরও চলে হত্যাকাণ্ড
বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ৯:৪২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
শেখ হাসিনা যখন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারত পালিয়ে যান, সেই সময় ঢাকার কাছে সাভারে ঘটে যায় এক কলঙ্কজনক গণহত্যা। পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে মার্চের সেই দিনে অন্তত ১৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১০ জন ছিলেন শিক্ষার্থী। আহত হন ৩৩ জন।
এদিন সকাল থেকেই সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল, আর তাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্র-জনতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে গণভবনের দিকে এগোতে থাকেন। বেলা ১১টার পর, হাসিবুর রহমান নামে ১৭ বছর বয়সী এক মাদ্রাসাশিক্ষার্থী পুলিশ গুলিতে নিহত হন। একইভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদও হচ্ছেন নিহত। পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হতে থাকে।
দোকান ও রাস্তার যায়গাগুলোতে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলি ছড়াতে শুরু করে, আর ছাত্র-জনতা দৌড়াতে থাকে জীবন বাঁচাতে। ২টা ৭ মিনিটে পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করে, এবং বিক্ষোভকারীরা আহতদের নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। প্রত্যক্ষদর্শী মোস্তাফিজুর রহমানের বর্ণনায়, তিনজনকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যেতে দেখা যায়।
মুহূর্তের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, ১৭ বছর বয়সী বার্নিশ মিস্ত্রি মুজাহিদ মারা যান, গুলিবিদ্ধ হয়ে। একই ঘটনায় আরও অনেকের জীবন শেষ হয়ে যায়, যেমন অটোরিকশাচালক মো. সুজন।
বিকেলের দিকে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সংঘর্ষ শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে। সাভার থানার কাছে পুলিশের গুলিবর্ষণ যেন থামছেই না। ছাত্র-জনতাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে ছাত্র-জনতার সংখ্যা বাড়তে থাকে, কিন্তু পুলিশ তাদের থামাতে আরও গুলি চালাতে শুরু করে।
মুক্তির মোড়ে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্ররা একত্রিত হয়ে পুলিশকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, কিন্তু পুলিশের গুলিবর্ষণ তীব্র হয়ে ওঠে। হাসপাতালগুলোতে জনাকীর্ণ হয়ে যায়, এবং চিকিৎসকরা আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এমনি অবস্থায়, এনাম মেডিকেল কলেজ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলি ও আহতদের আওয়াজে কেঁপে ওঠে।
শেষ পর্যন্ত গুলিবর্ষণের একাধিক ঘটনায় ১৫ জন হতাহত হন। তাদের মধ্যে অধিকাংশের গুলি লাগে শরীরের ওপরের অংশে, যা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় তাদের। হাসপাতালে পৌঁছানোর সময় অনেকেরই মৃত্যু ঘটে।
সাভারে এই দিনটির ঘটনা ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। যারা এই গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, কারণ এই বিধ্বংসী ঘটনায় অনেক innocent মানুষের প্রাণদণ্ড হয়েছিল। সাভারের এই হত্যাকাণ্ড কেবল একটি স্থানীয় ঘটনা নয়, বরং সমগ্র দেশের মানবধিকার লঙ্ঘনের একটি দৃষ্টান্ত।
১১২ বার পড়া হয়েছে