জুলাই অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে: প্রধান উপদেষ্টা

শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ১:০১ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতির গলায় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে।
এই সাহসী তরুণদের অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার দৃঢ় সংকল্প। তিনি এক শ্রদ্ধার সাথে যারা এই গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন, তাদেরকে স্মরণ করে বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন একটি তাৎপর্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশের বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই কথাগুলো বলেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এবারের বইমেলার থিম রাখা হয়েছে ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ’।
ড. ইউনূস বলেন, বইমেলা আজ আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এবং এর আয়োজনের গুণগত ও আয়োজনগত উন্নতি অব্যাহত থাকবে। লেখক-লেখিকারাও বছরের পর বছর বই প্রকাশের জন্য প্রস্তুতি নেন। প্রকাশকরা সঠিক সময়ে তাদের বইগুলো পাঠকদের সামনে হাজির করতে চেষ্টা করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, একুশের মাস মানেই পুনরুত্থান, আত্মপরিচয়ের খোঁজ এবং সংগ্রামের নতুন অধ্যায় শুরু। এবারের বইমেলার প্রেক্ষাপট আমাদের নতুন উন্মোচন দেবে।
ড. ইউনূস বলেন, শহীদ বরকত, সালাম, রফিক ও জাব্বারের মৃতদেহে যে অঙ্গীকার মিশ্রিত হয়েছিল, তা জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের শক্তি নিশ্চিত করেছে। অর্ধশতাব্দী পরে সেই বিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়ে পুরো দেশ পরিবর্তন করে দিয়েছে। এই ঘটনাই আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জাগিয়ে তুলেছে।
তিনি আরো বলেন, একুশ আমাদের জাতীয় সত্তার পরিচয় বহন করে এবং আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন গড়ে তোলে। এই বন্ধন আমাদের সকল সংকট, দুর্যোগের সময় শহীদ মিনারে আত্মপ্রকাশ করে, যেখানে আমরা শান্তি ও সমাধান খুঁজে পাই।
ড. ইউনূস আরও বলেন, একুশের এই সাংস্কৃতিক শক্তি প্রজন্মের পর প্রজন্মে বিস্তৃত হয়েছে, যা আমাদেরকে দুঃসাহসী করে তুলেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিশ্বের সামনে অসাধ্যকে সাধন করেছে।
তিনি জানান, আমরা যদি একুশকে একটি মৌলিক অধিকার আন্দোলন হিসেবে দেখি, তাহলে এটি আরো বৃহত্তর আকার ধারণ করে। এতে কিশোর-কিশোরি, তরুণ-তরুণীদের সৃজনশীলতার স্বীকৃতি দিতে পারি এবং তাদের নতুন উদ্যোক্তা হবার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারি।
ড. ইউনূস প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি প্রদান করতে চাইলে বলেন, তারা দেশের বাইরে নানা ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জন করছে। একুশের দিনে তাদেরও স্মরণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কারণ তারা নিজেদের সংস্কৃতিকে ধারণ করে সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দেয়।
এভাবে, এবারের বইমেলায় ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়কে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৬৩ বার পড়া হয়েছে