সর্বশেষ

জাতীয়

দুর্নীতি একেবারেই নির্মূল করা সম্ভব হবে না: দুদক চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ২:৫৭ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা সমাজে অবিচার অনিয়ম দুর্নীতি লালন করি বলেই ৫ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা কেন ঘটল তা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে।

তিনি বলেন, ক্ষমতাকে আমরা দায়িত্ব মনে করলে এত অনিয়ম দুর্নীতি হয় না। সমাজ থেকে দুর্নীতি একেবারেই নির্মূল করা সম্ভব হবে না। দুর্নীতি অতীতেও ছিল। হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে তা অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে, তার জন্য প্রয়োজন আমাদের সদিচ্ছা। দুর্নীতি কমিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। 

 

বুধবার কুমিল্লায় দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন এসব কথা বলেন। নতুন স্বপ্ন নতুন দিন, দুর্নীতিকে বিদায় দিন- স্লোগানে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ গণশুনানির আয়োজন করা হয়। এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের ১৭০তম গণশুনানি ছিল।

 

অনুষ্ঠানে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ বক্তব্য দেন।

 

জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ, সনাকের সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান প্রমুখ।

 

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সমাজের প্রত্যেকটি অবিচারের বীজ হলো দুর্নীতি। ক্ষমতা তখনই প্রভাবিত হয় যখন ওটা অপব্যবহার করা হয়। ক্ষমতাকে মনে করতে হবে দায়িত্ব। আমাদের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক। দুদক একটি পরিপূর্ণ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে সে বিশ্বাস আমরা করি। এতে সহযোগিতা করবেন সেবাগ্রহীতা এবং সেবাদাতা উভয়পক্ষই। আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তুলতে হবে। পরিবার থেকে দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। সকল জায়গায় অনিয়মকে অনিয়ম হিসেবে দেখতে হবে। এতে আমাদের মাঝে দুর্নীতি করার প্রবণতা কমে আসবে। 

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি দুদকের প্রথম গণশুনানি। শুনানিতে ৪টি বুথে সেবাবঞ্চিত জনসাধারণের ১৩৯টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে ৪০টি অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানি করা হয়। 

 

গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানির শিকার বা সেবাবঞ্চিত সংক্ষুব্ধ জনসাধারণ তাদের অভিযোগসমূহ কুমিল্লার সব সরকারি দপ্তর প্রধানদের উপস্থিতিতে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরেন। একইসঙ্গে সেবাবঞ্চিত জনসাধারণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও মূল্যবোধ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করাই গণশুনানির মূল অভিপ্রায় বলে জানান দুদক কর্মকর্তারা। 

 

গণশুনানিতে নগরীর বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন প্রান্ত বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমি ১৩টি গ্যাসের চুলার বিল পরিশোধ করে আসছি; কিন্তু বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ তাদের সফটওয়্যারে মাত্র ১টি চুলার বিল এন্ট্রি করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। এতে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। আমি বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করি। উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে দুদক কর্মকর্তারা গ্রাহক সাজ্জাদের পক্ষে রায় দেন। তাকে ১৩টি চুলার বৈধ সংযোগ প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা হয়রানির অভিযোগ করেন জেলার আদর্শ সদর উপজেলার কালিরবাজার এলাকায় সুমন মিয়া। তিনি বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ আমাকে গ্যাস সংযোগ প্রদান করে। পরে তারাই আবার সংযোগটি অবৈধ দাবি করে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে বিষয়টি সমাধান দেওয়া হয়। তাকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

দুদক কর্মকর্তারা বলেন, গ্যাসের জনবিমুখ আইন আমরা পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেন মামুনুর রশিদ নামের এক গ্রাহক। তিনি ভুতুড়ে বিল আদায় এবং হয়রানির অভিযোগ করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে হয়রানি করে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়। একই বিভাগের একজন উপসহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন আরেক ভুক্তভোগী। দুদক কর্মকর্তারা এসব বিষয়েরও সমাধান করে দেন।

 

সৌর বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন পিডিবি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পিডিবির কর্মকর্তারা বিভিন্ন ভবন মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে সোলার ছাড়াই সংযোগ প্রদান করেন। একটি সোলার দেখিয়ে অসংখ্য ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুস নিয়ে এমন অনিয়ম করা হয় বলে অভিযোগ করেন ওই ব্যবসায়ী। 

 

সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলা এবং অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করেন একাধিক ভুক্তভোগী। এ সময় দুদক কর্মকর্তারা চিকিৎসকদের অবহেলা এবং গাফিলতির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পরে একে একে ৪০ জন অভিযোগকারী তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এর মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি।

দুর্নীতি
দুদক চেয়ারম্যান

১১৮ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন