”জাগো, বাহে, কোনঠে সবাই?

রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১১:৩১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজনীতি বেহাত হয়ে গেছে। টাকাওয়ালা মহাজন টাকা দিয়ে পদ কিনে সম্মানিত হতে চাই, ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েই সে বিনিয়োগের বহুগুন তুলে নেয়, এর জন্য কে কি বললো তাতে কিছু যায় আসে না।
কাবুলিয়ালা বর্গীদের বকেয়া আদায় আর লঙ্কার রাবণের চরিত্রে সে নিখুঁত, আবেগ ভালোবাসা, দেশ ও দলপ্রেম অর্থহীন, বাণিজ্যের সমিকরণে সে চড়া দামে প্রভাব ও আধিপত্য কেনে। তারপর সামন্তপ্রথায় নিজস্ব বলয়ে জমিদারিত্বের তালুক নেয়। বহুগুনে সম্পদ বাড়ে, নেতাকর্মি, অনুসারী আর সহমত ভাইও বাড়ে। রাজনীতির শেষ কথা এখন টাকা। মুচি-মেথর, চোর ডাকাত, ভূমি দস্যু বেশি দরে পদ কেনে, ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়।
শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে বস্তাবন্দি করে নাগরিক অধিকার কুক্ষিগত করেন। ১৬ বছরের বিভীর্ষিকায় জুলুম নির্যাতন আর দমন পীড়নের উন্মাত্তায় সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক শক্তিকে দানব হিসেবে দেখেছেন। রাষ্ট্রের বিচার, আইন ও সাদা অস্ত্রের নিয়ন্ত্রকরা বাধ্য রক্ষিতার মতো অবৈধ সরকারের হুকুম পালন করেছে। ভারতকে সব কিছু উজাড় করে দিয়ে সেবাদাসী শেখ হাসিনা পৈশাচিক উন্মুত্ততায় ভয়ের সংস্কৃতিতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মি ও সাধারণ মানুষকে আয়না ঘরের জুজুর মধ্যে জিম্মি রাখেন।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর জুলাই বিপ্লবের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ায় নাগরিক, দল-মত নির্বিশেষে, মৃত্যুর মিছিলে সন্তানের পাশে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন পিতা-মাতা, এভাবেই আসে ৫ আগস্টের ছাত্র-গণবিস্ফোরণ। সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মের প্রাণ ও রক্তের স্রোতে ভেসে যায় ফ্যাসিস্ট, ঝড় থামতেই রাষ্ট্র ক্ষমতার ভাগাভাগিতে আবারও সৃষ্টি হয়েছে বহুমুখি বিতর্ক, আবার সেই রাবন ও লঙ্কার হিসাব।
এবার আশাবাদী হওয়ার আলো ছড়াচ্ছে বিপুল সংখ্যক নতুন ভোটার। দেশের জন্য হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে ঘাতক রাষ্ট্রের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল আবু সাঈদ, তারই সাহসী সহযোদ্ধারা প্রথমবার গণতন্ত্র ফেরানো, বেহাত রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করার ভোটযুদ্ধের সৈনিক। মোট ভোটারের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ, সঙ্গে মা বাবা ও ভাইবোনকে রাখতে পারলে আলোমুখী এই প্রজন্মের সঙ্গে দেশের বেশিরভাগ মানুষ একজোট হবে। এই মেধাবী তরুণ প্রজন্ম পদ-পদবীর জন্য কারও পা চাটে না, দলান্ধ হয়ে রাত-দিন নেতার সঙ্গে সহমত, জিন্দাবাদ বলে না। তারা মাথা উচু করে সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলার হিম্মত রাখে।
আমারও আজ রংপুরের সেই ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়/ যখন শকুনি নেমে আসে এই সোনার বাংলায়” সেই পথ ধরেই আবারও রংপুরের আবু সাঈদও জগদ্দল দখলদার হঠাতে বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দিয়েছিল।
মাঠ পর্যায়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতারা দলীয় শৃঙ্খলা পকেটে ভরে এলাকায় আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে মাই ম্যান মিশনে বেপরোয়া। পারিবারিক ও নিজস্ব মতাদর্শে জেগে ওঠা তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশই দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মি ও সমর্থক, পদ-পদবী ও ব্যক্তি স্বার্থের জন্য এই প্রজন্ম নেতার জমিদারিত্বে নতজানু প্রজা হবে না বলে আমি বিশ্বাস করি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি শহীদ জিয়ার বহুমুখী গণতন্ত্রের উদারতা, সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বৈষম্যমুক্ত, স্বনির্ভর দেশের নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন দেখি, একাধিক নতুন দলের সম্ভাবনাকেও স্বাগত জানাই। তবে কোনভাবেই আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে, নিজের জন্মদাতাকে বাদ দিয়ে দলীয় নেতাকে প্রিয় অভিভাবক বলার পক্ষে নই। আবেগ ও ভালোবাসায় দলীয় আদর্শ বুকে লালন করি, মিছিলে-স্লোগানে, যুক্তি-তর্কে সরব থাকি, রুটি-রুজির জন্য দলের কাছে কোন প্রত্যাশা করি না।
“নেতৃবৃন্দ, সবার আগে আপনাদের নিজ নিজ পেশা, কাজের উপর গুরুত্ব দিতে হবে, কর্মক্ষেত্রে আপনি সৎ ও সফল হলেই দলীয় নেতাকর্মি হিসেবে মানুষের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে” –এ, কে. এ ফিরোজ নুনের লেখা ‘শহীদ জিয়াউর রহমান’ বই এর ১৮৬ পৃষ্ঠা। লোক দেখানো নয়, সত্যিকারের ভালো মানুষ শহীদ জিয়া এ কথা রেখেছিলেন সে সময়ে দেশের নির্লোভ পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের দলে এনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। জীবন দশায় স্বজনপ্রীতি করেননি, টাকাওয়ালা মহাজনদেরও দলীয় পদ দেননি।
দল যেন কারও পেশা, ব্যবসায় পরিণত না হয়, চোখ-কান খোলা রাখুন, আমাদের আবেগ ও ভালোবাসাকে তালুবন্দি করে দল ভাঙিয়ে কেউ আখের গোছাতে চাইলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ুন, প্রতিবাদ করুন, না পারলে ঘৃণা পোষণ করুন।
তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার প্রত্যাশা, মুক্তির এই লড়াইয়ে দলের থেকেও দেশকে প্রাধান্য দিয়ে তারা নিজ নিজ এলাকার যোগ্য ও পরীক্ষিত ব্যক্তিকে আগামী দিনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবে, আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য রাষ্ট্র গড়তে শক্ত হাতে হাল ধরবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী।
৪৩৮ বার পড়া হয়েছে