এফডিসিতে অঞ্জনা'র জানাজা, চির বিদায় এক আলোকিত তারার
শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় অভিনেত্রীর মরদেহবাহী গাড়িটি প্রবেশ করে চলচ্চিত্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএফডিসির ভেতরে। সেখানে অঞ্জনাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন চিত্র পরিচালক, শিল্পী সমিতির সদস্য ও অভিনেতাসহ চলচ্চিত্র ও অভিনয় জগতের অনেকে।
বাদ জোহর এফডিসিতে জানাজা শেষে অভিনেত্রীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে। সেখানে আরেকবার জানাজা হয়েছে এই নায়িকার।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তার ১টা ২০ মিনিটে অঞ্জনা রহমান মারা যান। সত্তর ও আশির দশকের ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রীকে বুধবার রাত থেকে হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেই অঞ্জনা চলে যান না ফেরার দেশে।
অভিনেত্রীর ছেলে মনি জানিয়েছিলেন বাড়িতে জ্বর হওয়ার পর বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে অঞ্জনাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে রক্তের সংক্রমণ ধরা পড়লে ওই হাসপাতালেই তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে কিছুটা উন্নতি হলে সিসিইউতে আনা হয়।
সেখানে নয় দিন চিকিৎসার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বুধবার রাতে বিএসএমএমইউ ভর্তি করা হয় অঞ্জনাকে।
রক্তের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া, ফুসফুসে পানি আসা, ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া, এর মধ্যেই স্ট্রোক হওয়াসহ নানা জটিলতা তৈরি হয় অভিনেত্রীর। এক পর্যয়ে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়।
অঞ্জনা বিয়ে করেন পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে। তবে পরে তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
সিনেমায় আসার আগেই অঞ্জনা পরিচিতি পান নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি ঢাকাই সিনেমায় কাজ শুরু করলেও তার মুক্তি পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র ছিল শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’।
প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেত্রী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো- সুখের সংসার, যাদু নগর, সখী তুমি কার, নেপালী মেয়ে, রাখে আল্লাহ মারে কে, একই রাস্তা, অঙ্কুর, মাধবীলতা, জবরদস্ত, জিদ্দী, আশীর্বাদ, শাহী কানুন, রূপসী বাংলা, বাপের বেটা, মরুর বুকে, প্রমাণ, বিক্রম, আকাশপরি, রাজার রাজা, বিধিলিপি, দিদার, আনারকলি, অগ্নিপুরুষ, টার্গেট, আন, মহারাজ, মানা, আশার প্রদীপ, প্রতিরোধ, বেদনা, সোনার পালঙ্ক, চোখের মনি, প্রেমের সমাধি, ঈমানদার, অংশীদার, সুখ, দোযখ ইত্যাদি।
এছাড়া ভারতের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী; পাকিস্তানের অভিনেতা ফয়সাল, নাদীম, জাভেদ শেখ, ইসমাইল শাহ; নেপালের শীবশ্রেষ্ঠ ও ভুবন কেসির সঙ্গেও অভিনয় করেছেন এই নায়িকা।
চার দশকের ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন অঞ্জনা। ‘গাংচিল’সিনেমার জন্য ১৯৮২ সালে এবং ‘পরিণীতা’সিনেমার জন্য ১৯৮৬ সালে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পাশাপাশি তিনবার বাচসাস এবং নৃত্যে দুবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯৯২ সালের পর থেকে সিনেমায় অনিয়মিত হয়ে যান অঞ্জনা। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় তার সর্বশেষ সিনেমা ‘ভুল’।
১১৯ বার পড়া হয়েছে