সর্বশেষ

ফেবু লিখন

ডেট লাইন শিলাইদহ,কুমারখালী

কাজী আখতার হোসেন
কাজী আখতার হোসেন

শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ ৩:০১ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
গত সন্ধ্যায় (২৮ নভেম্বর ২০২৪) টেলিফোনে দুজন বন্ধুকে পাকড়াও করে বাড়িতে নিয়ে এসে আড্ডা দিলাম বেশ কিছুক্ষণ। গতকালের লেখাটায় নানামুখী প্রতিক্রিয়া আমাকে চিন্তিত করেছে ; আবার উৎসাহিতও করেছে। প্রত্যেক মানুষই নানাভাবে স্মৃতি কাতর ; কেউ বেশি কেউ কম।

গতকালই আমাদের ঠিক হয়েছিল আজ শিলাইদহে যাব। যদিও প্রায় শৈশব কাল থেকেই শিলাইদহ যেতে আমরা অভ্যস্ত। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর প্রথম যে রবীন্দ্র জয়ন্তী হয় শিলাইদহে জাতীয় পর্যায়ে সেটাতে আমি উপস্থিত ছিলাম, যা এখনো স্মৃতি হয়ে আছে।
আমার মায়ের গ্রামের বাড়ি শিলাইদহের পাশেই কোমরকান্দি গ্রামে। ছোটবেলায় কোমরকান্দি যাওয়ার স্মৃতি মায়ের মনেও আছে এখনো কিছু কিছু। আমার নানী তার শিশুকালে পালকি চড়া জমিদার রবীন্দ্রনাথকে দেখে থাকলেও দেখতে পারেন। সম্ভবত জীবিত কালে একবার ওই প্রসঙ্গে কিছু যেন বলেছিলেন আমাদের যা ভুলে গেছি।
আমাদের বন্ধু শমশের ঢাকা থেকে বলেছিলেন তাদের গ্রামের দিকে যেতে এবং সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে চা খেতে। তবে এবারে আমরা একটু দিক পাল্টালাম।। শিলাইদহ মুখী হলাম। সকাল দশটায় মোহন ও রফিক
এল। বাড়তি হিসেবে পেলাম আবুল হোসেন চাচাকে। এসব ব্যাপারে আবুল চাচার খুবই আগ্রহ। তার পড়াশোনা ও জানাশোনা অনেকের চেয়ে ভালো।
হেমন্তের সুন্দর সকালে শিলাইদহের দিকে এগোচ্ছি। চকরঘুয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে মোড় নিলাম ডান দিকে। এখন এই গ্রামের নাম আলাউদ্দিন নগর। আমার যতদূর মনে পড়ে গ্রাম ও মৌজার নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমারও নগন্য ভূমিকা ছিল। আলাউদ্দিন নগরে এখন বহু সংখ্যক স্থাপনা প্রতিষ্ঠিত করেছেন আলাউদ্দিন ভাই। প্রাসাদ সম বাড়ি করেছেন। আরো কতকিছু। সেই অর্থে এটি আর গ্রাম নেই।
শিলাইদহে পৌঁছে প্রত্ন বিভাগের কর্মচারী শাজাহান কে ফোন করলাম আমি এসেছি কয়েকজন বন্ধুসহ। আগের অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের কালের শিলাইদহ বলা যায় এখন অনেকটাই অনুপস্থিত। নগর সভ্যতায় শুধুমাত্র কুঠিবাড়িটি রয়েছে আগের মতই। দিগন্ত বিস্তৃত আগের সেই আমবাগান নেই বলে মনে হল। পরিকল্পিতভাবে এটাকে একটা টুরিস্ট রূপ দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ এখন বেঁচে থাকলে অবাক হয়ে যেতেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই নানা বৈচিত্র এসেছে। নগর সভ্যতার ছাপ পড়েছে।
ইংল্যান্ডের ষ্ট্রাটফোড' আপন আভনে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের গ্রামের বাড়িতে আমার কয়েকবার যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। সেই বাড়িতে একবার দেখেছিলাম রবীন্দ্রনাথের একটি আবক্ষ মূর্তি। শুনেছি জ্যোতি বসু যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তিনি নাকি এটি বসিয়েছিলেন।
তুলনা করলে কেন যেন আমি শিলাইদহ কে এগিয়ে রাখি। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির বড় একটি অংশ এই শিলাইদহে। গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদও তিনি করেছিলেন এখানে বসেই। রবীন্দ্রনাথের কল্যাণে বহু বিখ্যাত ব্যক্তি শিলাইদহে এসেছিলেন। পদ্মায় বোটে চড়ে রবীন্দ্রনাথ নিজেকে সবচেয়ে বেশি স্বাধীন মনে করতেন। পদ্মা প্রবাহচুম্বিত শিলাইদহে না এলে রবীন্দ্রনাথ পুরোপুরি রবীন্দ্রনাথ হতে পারতেন না। বোটে বসে তিনি অসংখ্য লেখা লিখেছেন।
কুঠিবাড়ির জাদুঘরের স্মৃতি সামগ্রির ব্যাপারে আমাদের খুব একটা আগ্রহ ছিল না এগুলো আগে বহুবার দেখেছি। শাজাহান দর্শনার্থীদের ধারা বর্ণনার মাধ্যমে সবকিছু দেখাচ্ছিলেন।
আমরা চলে গেলাম বকুলতলায়। বকুল তলার পুকুর ঘাটে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালাম। ছবি তোলার জন্য একজন সুবেসি তরুণীকে বললাম। জিজ্ঞেস করলাম আপনি ছাত্রী চাকরিজীবী না গৃহিণী। তিনি উত্তর দিলেন তিনি একজন ডাক্তার। তাকে ধন্যবাদ বকুলতলার ছবিটি তিনি তুলে দিলেন।
আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস ডঃ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার পড়া শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলোর মধ্যে এক নম্বরে নাম দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের গোরা উপন্যাসটি। বহু আগে বইটি পড়েছিলাম। এখন নতুন করে পড়বো পড়বো করে আর পড়া হয়ে উঠছে না। আদৌ হবে কিনা জানিনা।
এখন রাস্তাঘাট সব জায়গাতেই পাকা। হেমন্তের উজ্জ্বল দিনে গ্রামগুলোর মধ্যে দিয়ে চলে আসতে আসতে বেশ ভালো লাগছিল। কিছুদিন আগেই সম্ভবত ফসল উঠেছে। নবান্ন উৎসব আজকাল হয় কিনা জানিনা। কৃষি মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সময় এক নবান্ন উৎসবে যোগদান করতে আমি হবিগঞ্জে গিয়েছিলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর আমার সরাসরি শিক্ষক ডঃ শওকত হোসেন স্যার আমার সঙ্গে একবার শিলাইদহ কুমারখালী আসতে চেয়েছিলেন। ব্যাটে বলে সে সময় আর হয়ে ওঠেনি। বিষয়টা নিয়ে আমি একটু লজ্জিতই আছি। স্যার সম্ভবত এখন কানাডায় বসবাস করেন। প্রিয় জুনাইদুল হক কিংবা গোলাম ফারুক খান ভালো জানেন। স্যারের সঙ্গে ধানমন্ডি এলাকায় ওরা অনেক অনেক আড্ডা দিতেন।
বাড়িতে পৌঁছে মায়ের কাছে যতটা পারি আমার শিলাইদহ ভ্রমণের কাহিনী গল্প করলাম। তার নানা বাড়ি ঐদিকেই আগেই বলেছি। তিনিও কিছু কিছু স্মরণ করার চেষ্টা করলেন।
লেখক: কাজী আখতার হোসেন, সাবেক সচিব

(লেখাটি তাঁর ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)

কাজী আখতার হোসেন
ডেট লাইন শিলাইদহ

১৪৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
ফেবু লিখন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন