জাতীয়

২০ জুলাই ২০২৪: শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবির মুখে সরকারের কঠোর অবস্থান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫ ৯:০৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
২০ জুলাই ২০২৪—দেশের ইতিহাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এক ভয়াবহ ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মাসব্যাপী চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজকের দিনে পৌঁছায় নগ্ন সহিংসতার চূড়ান্ত পর্যায়ে, যাতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে এবং দেশের প্রশাসনিক কাঠামো চরম সংকটে পড়ে।

২০ জুলাই সকাল পর্যন্ত কারফিউ ও সহিংস পরিস্থিতিতে সরকারের কয়েকজন শীর্ষ মন্ত্রী—আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসেন। সেখানে ছাত্র আন্দোলনকারীরা আট দফা দাবি পেশ করলেও আলোচনা কার্যকর কোনো সমঝোতাহীন অবস্থায় শেষ হয়। এই আলোচনার মাঝেই বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ, গুলি, গ্রেপ্তার ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পরে, আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয় এবং সরকার উচ্চকণ্ঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘শক্ত একশান’ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
শুধু ২০ জুলাই ও তার আশেপাশের সময়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ বহু জেলায় অন্তত ২৬–২৯ জন একদিনেই প্রাণ হারান। পুরো আন্দোলনে এ পর্যন্ত আহত হন অন্তত ১৫,০০০ জন।

এদিন সকাল থেকেই দেশের শতাধিক ইউনিভার্সিটি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র ধর্মঘট ও প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, শাহবাগ, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জসহ নানা এলাকায় ছাত্ররা পরিবহন অবরোধ, মিছিল ও পথ অবরোধ করে। শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবির মুখে সরকার প্রথমে কঠোর অবস্থান নেয়, পরে আলোচনারও চেষ্টা করেন।

১৮ জুলাই রাত থেকে দেশে সব ধরনের মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের খবর, যোগাযোগ এবং সত্য তথ্য আদান-প্রদানে ভয়াবহ বাধা সৃষ্টি হয়। ইন্টারনেট বিভ্রাট ২৮ জুলাই পর্যন্ত চলে। সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট সমপ্রচারে প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসেবে ‘ডাটা সেন্টার পুড়ে যাওয়া’ বা ‘প্রযুক্তিগত সমস্যা’র অজুহাত দেখা গেলেও, সকল মহলে পরিষ্কার হয় এটি আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের রাষ্ট্রীয় কৌশল।

২০ জুলাইয়ের ভোর থেকে ঢাকা ও দেশের ৪৭টি জেলায় সেনাবাহিনী ও ৩০০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিশেষ ক্ষমতা অনুযায়ী পুরো দেশে কারফিউ জারি হয় এবং স্থানভেদে যানবাহন চলাচল, জনসমাগম ও যেকোনো ধরণের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ ও র‍্যাবেরও কড়া অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।

২০ জুলাই ২০২৪-এ বাংলাদেশে উদ্ভুত ঘটনার আন্তর্জাতিক কাভারেজ ছিল নৃশংস দমন, ছাত্র আন্দোলনের অভূতপূর্ব সংহতি ও সরকারি তথ্য-নিয়ন্ত্রণ-নির্ভর। ঐ দিনের বিবরণ ও ছবিগুলো বিদেশি সংবাদদাতাদের ভাষ্যে, দুঃসহ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ঢাকার রাস্তায় সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন, কারফিউ এবং “শুট-অন-সাইট” আদেশ প্রসঙ্গে বিবিসি ও আলজাজিরা লেখে, রাজধানীতে এক ভয়াবহ নিঃসঙ্গতা ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, নিরাপত্তাবাহিনী অবস্থান নেয় প্রধান প্রধান স্থানে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি জানায়, সরকার নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে ছাত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের উপর প্রাণঘাতী হামলা, গুলি ও ব্যাপক সহিংসতা চালায়।

নিউ ইয়র্ক টাইমস, লে মন্ড, সিএনএন, রয়টার্স সবগুলোই প্রধানমন্ত্রীর দলীয় ছাত্রসংগঠনের সহিংসতায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন, স্বার্থান্বেষী কোটা-বিধান ও বিচারবহির্ভূত হত্যা-গ্রেপ্তার নিয়ে বিস্তৃত আলোকপাত করেছে।
২০ জুলাই ২০২৪ সে দিনের রক্তাক্ত অবস্থা, জন-আন্দোলনের শক্তি ও রাষ্ট্রশক্তির কঠোর দমনপীড়ন—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ইতিহাসের এক অনন্য, বিভীষিকাময় স্মারক হয়ে আছে।

১২৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন