চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান আর নেই

হামিদুজ্জামান খান গত সপ্তাহে নিউমোনিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ), পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

তার পরিবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হামিদুজ্জামান খান। তিনি দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষকতা করেন (১৯৭০–২০১২)। ফর্ম, বিষয় এবং নিরীক্ষাধর্মী ভাস্কর্যের জন্য তিনি ছিলেন বিশেষভাবে খ্যাত।

১৯৭৬ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় তার নির্মিত ‘একাত্তর স্মরণে’ ভাস্কর্যটি দেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের অলিম্পিক ভাস্কর্য পার্কে তার ‘স্টেপস’ শিরোনামের ভাস্কর্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাকে পরিচিত করে তোলে।

তার উল্লেখযোগ্য কিছু ভাস্কর্য হলো—

আশুগঞ্জ সার কারখানায় ‘জাগ্রত বাংলা’
সিলেট ক্যান্টনমেন্টে ‘হামলা’
বঙ্গভবনে ‘পাখি পরিবার’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘শান্তির পায়রা’
ঢাকা সেনানিবাসে ‘বিজয় কেতন’
বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে ‘ইউনিটি’
চিত্রশিল্পেও সমান দক্ষতায় কাজ করেছেন তিনি। জলরঙ ও অ্যাক্রেলিকে বিমূর্ত ধারায় নিসর্গ ও মানবশরীর তার প্রিয় বিষয় ছিল। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর তার শিল্পকর্মের ওপর “হামিদুজ্জামান খান ১৯৬৪–২০১৭” শিরোনামে রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। আজীবনে তিনি ৪৭টি একক প্রদর্শনী করেছেন।

২০০৬ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে বাংলা একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন।

দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে তার অবদান দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।